অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজেয়াপ্তের আদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে থাকা আট কোটি ১০ লাখ ডলার বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি বিশেষ আদালত। গত বৃহস্পতিবার আদালত এ আদেশ দেন। এই আদেশ ফিলিপাইনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে আদালত থেকে এ আদেশের অনুলিপি সংগ্রহ করেছে সিআইডি। এটি তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ওই দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। পাশাপাশি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা মামলার পক্ষের সহায়ক দলিল হিসাবে নিউইয়র্কের আদালতেও পাঠানো হবে।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ জানান, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত, ফিলিপাইন সরকারের সরবরাহকৃত পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধের মাধ্যমে এ অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, সংগৃহীত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিশেষ আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা আট কোটি ১০ লাখ ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। তারা সেটি ফিলিপাইনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। ফলে রিজার্ভের চুরি হওয়া টাকা ফেরত পেতে সহায়ক হবে। রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষে নিউইয়র্কের আদালতে রিজার্ভ চুরি মামলার শুনানির সময় ফিলিপাইনের নিয়োগ করা আইনজীবী আদালতে বলেছিলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতে একটি মামলা চলমান। ওই মামলার তদন্ত রিপোর্ট বা আদালতের আদেশের কপি মামলার বিষয়ে বড় একটি উপকরণ হতে পারে। তারা সেটি আদালতে উপস্থাপন করার আবেদন করেছিলেন। ফলে আদালত বাংলাদেশে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বা আদালতের আদেশ চেয়েছিলেন। এতদিন সেটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন ঢাকার আদালতে রায় হওয়ার কারণে এটি দেওয়া সম্ভব হবে। এটি নিউইয়র্কের আদালতে দিলে তারা সেটি মামলার উপকরণ হিসাবে আমলে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে নিউইয়র্কের আদালতের রায় বাংলাদেশে অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

একই কপি ফিলিপাইনেও পাঠানো হবে। তবে ফিলিপাইনে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন এ বিষয়ে কাজ করা বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা। কারণ ফিলিপাইনের আরসিবিসি দাবি করে আসছে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকজন জড়িত। এ হিসাবে তারা গত সরকারের আমলে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করেছে। তারা ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তা দেওয়া হয়নি। কারণ বলা হয়েছে, এটি বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়।

২০২৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকায় যায় দুই কোটি ডলার। সেটি বাংলাদেশ ওই সময়ই ফেরত পেয়েছে। ফিলিপাইনে যায় আট কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছে। বাকি ছয় কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংক থেকে ক্যাসিনোতে চলে গেছে। ফলে ওই অর্থ আর ফেরত পায়নি। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, ফিলিপাইন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ফিরিয়ে দেবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, দেশের আদালতের রায়টি পিলিপাইন বা আরও অন্য কোনো স্থানে পাঠানোর বিষয়ে আমরা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। এখন তারা আদালতের রায় বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছিবগাত উল্লাহ বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে আরসিবিসি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেঞ্জো ট্যান, জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস ডিগুইতো এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও জুপিটার ব্রাঞ্চের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা পাঁচটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ পাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ফিলিপাইনের আদালত ইতোধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করি দ্রুত সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ফিরিয়ে আনতে পারব। এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত চলমান আছে। আমরা দ্রুত এই মামলার চার্জশিট দিব। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্তের শেষ পর্যায়ে আছি। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারাই জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *