জাতীয়

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম আর নেই

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট নারীনেত্রী আয়শা খানম আর নেই। আজ শনিবার ভোরে তিনি বারডেমে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লান্স ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

তিনি র্দীঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে নারীর অধিকার আদায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন শেষে বঞ্চিত অধিকারহীন নারীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের নারী আন্দোলন এক অকৃত্রিম অভিভাবককে হারালো।

তার মৃতদেহ আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (১০/বি/১, সেগুন বাগিচা ঢাকা) শ্রদ্ধা জানানো হয়। নেত্রকোণায় নিজ গ্রামে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

আয়েশা খানমের জন্ম নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। পাকিস্তান আমলে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আয়শা খানম ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি নেত্রকোণার গাবড়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ এর দিকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রাবস্থায় থাকতে তিনি বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম আর নেই
আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়শা খানমকে শ্রদ্ধা জানানো হয়
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত হন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরপর ২০০৮ সাল থেকে তিনি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, আইন সংস্কার আন্দোলন, সিডও বাস্তবায়নসহ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তিনি একজন দক্ষ, সংগঠক ও সুবক্তা ছিলেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তার কন্ঠ ছিলো সোচ্চার। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি ও লবির ক্ষেত্রে ও তিনি পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী নারী আন্দোলনকে করে গড়ে তুলতে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ২০০২ সাল থেকে ৬৮ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারিয়েট এর নেতৃত্ব প্রদান করে আসছিলেন। বৈশ্বিক নারী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯২ সালে ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় মানবাধিকার সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১১ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সিডও কমিটির এবং কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সিএসডব্লিউ)এর বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও UNSCAP, IWRAW, UNIFEM কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও নারী ইস্যূতে তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি করতেন। তার লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

আয়শা খানমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারীনেত্রী আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, এই নারী নেত্রীর মৃত্যুতে দেশের নারী সমাজ একজন অকৃত্রিম বন্ধু ও সাহসী সহযোদ্ধাকে হারাল।

প্রধানমন্ত্রী প্রয়াতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এর আগে শনিবার আয়শা খানম ভোরে বারডেমে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লান্স ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

আয়শা খানম দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে নারীর অধিকার আদায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন শেষে বঞ্চিত অধিকারহীন নারীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *