ঢাকা: বাজেট বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-আমলা ও কালো টাকার মালিকদের সহায়ক এবং ঘোষণা ও প্রয়োজনের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট অসঙ্গতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাসদ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেকুজ্জামান বলেন, খাদ্য সরবরাহ, খাদ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, শ্রমিক-কৃষক, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের জীবন বাঁচাতে রেশন ব্যবস্থা চালু, শ্রমজীবীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। যে কৃষি ও কৃষক ধান, ভুট্টা, মাছ, মাংস, সবজী, ফল উৎপাদন করে করোনাকালে দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ৪২ শতাংশ শ্রমজীবীর কর্ম সংস্থান করেছে সেখানে বরাদ্দ ও ভর্তুকি বাড়ানো দরকার ছিল কিন্তু বাজেটে গত তিন বছর ধরে কৃষিখাতে ভর্তুকি একই পরিমাণ রাখা হয়েছে। ফলে মুদ্রাস্ফিতির বিবেচনায় কৃষিতে ভর্তুকি কমে গেছে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে ঘোষিত বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনের ও জীবিকার প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। গত বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এই বাজেট করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনমান রক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তার চাইতে বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, করোনায় আগের তুলনায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ৪২ শতাংশের বেশি হয়েছে অথচ তাদের জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ করা হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৪ লাখ আর বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির জন্য ১৫০০ কোটি টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য টাকার বাড়তি বরাদ্দ বাদ দিলে বাস্তবে তেমন কোন বরাদ্দই বাড়েনি। রাজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে জনগণের উপর বাড়তি ভ্যাটের বোঝা চাপালেও কর্পোরেট ট্যাক্স ২.৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়ে সরকার তার ধনিক তোষণের নীতিকে অব্যাহত রেখেছে।
‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের কর্ম সংস্থান ও অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। কিন্তু বাজেট ঐ খাতে বরাদ্দে প্রান্তিক পর্যায়ে। গত বাজেটে করোনাকালে প্রণোদনায় কৃষি ঋণের সুদ ৪.৫ শতাংশ অথচ গার্মেন্টসসহ শিল্পে তা ২ শতাংশ করা হয়েছিল, কৃষি ঋণের সুদ কমানোর প্রস্তাব এবারের বাজেটেও নেই। করোনায় কাজ হারিয়েছে শ্রমিক, ৬ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছে, প্রতি বছর শ্রমের বাজারে আসে ২২ লাখ তরুণ যুবক তাদের কর্মসংস্থানের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা এবারের বাজেট প্রস্তাবে নেই।
‘সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী এবং ২০ লাখের বেশি শিক্ষক করোনাকালে বিপর্যস্ত। ছাত্রদের জন্য শিক্ষা সহায়তা এবং শিক্ষকদের জন্য দুর্যোগ ভাতা প্রয়োজন থাকলেও বাজেটে তার নির্দেশনা নেই। নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং পাহাড় সমতলের আদিবাসী মানুষেরা করোনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপদাপন্ন হয়েছেন। তাদেরকে রক্ষায় কোনো বরাদ্দ ও নির্দেশনা বাজেট প্রস্তাবে নেই। এক্ষেত্রে গতানুগতিকভাবে দায়সারা গোছের প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘
কালো টাকা বৈধ করার ধারাবাহিক ভুমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে কালো টাকা উৎপাদনের ব্যবস্থা বহাল আছে এবং সরকার কালো টাকার উৎপাদন বহাল রাখতে চায়। একদিকে বাজেটে জনগণের উপর কর ভ্যাট বাড়ানো, অন্যদিকে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া লুটপাটের টাকার আইনি ও রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার নিন্দা করে কালো টাকা বাজেয়াপ্ত এবং তা উদ্ধার করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পখাতে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
তিনি এই বাজেটকে ধনী-শিল্পপতি-বড়লোক বান্ধব উল্লেখ করে শ্রমিক, কৃষক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত জনগণের স্বার্থে বাজেট সংশোধনের দাবি জানান।