কোভিড মহামারিকালের প্রথম বিপিএলে থাকছে না ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম)। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়াতেই ডিআরএস রাখা যাচ্ছে না বলে দাবি বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিলের। ধারাভাষ্যকারদের ক্ষেত্রেও বেশি ‘ফোকাস’ রাখা হচ্ছে স্থানীয়দের দিকেই।
আগামী শুক্রবার শুরু হচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আসর। ২০১৯ সালের আসরে ডিআরএস থাকলেও শুরুতে ছিল না আল্ট্রাএজ প্রযুক্তি। প্রবল সমালোচনার পরে তা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এবার গোটা ডিআরএসই নেই। বিশ্বের শীর্ষ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর আর কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে এই চিত্র অকল্পনীয়।
বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বললেন, পরিস্থিতির কাছে তারা অসহায়।
“কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা রাখতে পারছি না ডিআরএস। এখন ওরা (টেকনিশিয়ানরা) কেউ ফ্লাই করতে পারছে না। ওদের দুইটা টিম এখন দুই দেশে আছে, সেখান থেকে এই অবস্থায় বাংলাদেশে আসতে পারবে না।”
“ডিআরএসের সোর্স সারাবিশ্বে একটাই (হক-আই কোম্পানি)। ওরাই দেয় সব জায়গায়। ওমিক্রনের কারণে কেউ আসতে চাচ্ছে না। বিপিএলের পর আফগানিস্তান সিরিজ। সেটিতেও রাখতে পারব কিনা, সেটাও কথা বলতে হচ্ছে।”
শেষ নয় এখানেই, বিসিবির এই পরিচালক শোনালেন আরেকটি বড় আশঙ্কার কথাও।
“আমাদের বিদেশি আম্পায়ার ঠিক করা ছিল ইংল্যান্ডের, সেও জানিয়ে দিয়েছে যে আসতে পারবে না। এখন আমরা আবার বিকল্প খুঁজছি। হয়তো শ্রীলঙ্কা বা ভারত থেকে দুইজনকে নেব।”
ডিআরএস না থাকা মানে নিশ্চিতভাবেই বিতর্কের অবকাশ রেখে দেওয়া। বিদেশি আম্পায়ার কিংবা মানসম্পন্ন বিদেশি আম্পায়ার না পাওয়া গেলে সেই পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে, সংশয় নেই। বিপিএলের মতো আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর খরচ প্রচুর। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলকে ভুগতে হলে তা মেনে নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ডিআরএস ও ভালো বিদেশি আম্পায়ার না থাকা মানে তাই বিতর্ককেই ডেকে আনা।
ইসমাইল হায়দার মল্লিক তবু চেষ্টা করলেন ক্রিকেটীয় বাস্তবতার কথা তুলে ধরতে।
“ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে তো আসলে আলোচনার কিছু নেই। ডিআরএস পাইনি, তাদেরকে জানিয়ে দেব। আর শুধু বিপিএলে তো নয়, আন্তর্জাতিক সিরিজেও ভুল সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও আম্পায়াররা আমাদের ৪-৫টা ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এটা গোটা বিশ্বেই হয়। সবাইকে তা বুঝতে হবে।”
“একপাশে বিদেশি আম্পায়ার থাকবে, আরেকপাশে দেশি। আমার মনে হয় না, আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকবে।”
বিপিএল নিয়ে আরেকটি বড় অভিযোগের জায়গা বরাবরই থাকে নিম্নমানের টিভি সম্প্রচার ও ভালো মানের ধারাভাষ্যকার দল না রাখা। প্রতিবারই সম্প্রচারের মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিখ্যাত ধারাভাষ্যকারদেরও আনা হয়নি এই টুর্নামেন্টে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব বললেন, ডিআরএস ছাড়া সস্প্রচারের বাকি সবকিছু মানসম্পন্নই থাকবে।
“প্রোডাকশন ভালো করার চেষ্টা করা হবে। প্রতিবারই ২৬-২৭টি ক্যামেরা থাকে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের চেয়ে বেশি থাকে, এবারও থাকবে। অতীতে গ্রাফিক্স নিয়ে সমস্যা হয়েছে। এবার সতর্ক থাকার চেষ্টা করা হবে।”
“ওভারঅল প্রোডাকশন লেভেল ভালো হবে আশা করি। ডিআরএস না থাকলে তো বড় ঘাটতি থাকেই। তবে অন্যান্য সব প্রযুক্তি, ড্রোন বা যা থাকে, সব থাকবে।”
ধারাভাষ্যকার নিয়ে ইসমাইল হায়দার মল্লিকের দাবি, তারা ইচ্ছে করেই দেশের ধারাভাষ্যকারদের ওপর জোর দেন। বিদেশিদের ক্ষেত্রে যথারীতি বললেন কোভিড পরিস্থিতির কথা।
“আমরা তো স্থানীয়দের ওপর ফোকাস বেশি করতে চাই। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তো বটেই, বিপিএলেও। এখন আমরা স্থানীয় তরুণ কিছু ধারাভাষ্যকারকে প্রমোট করার চেষ্টা করছি। অন্তত ৫০ ভাগ ধারাভাষ্যকার আমরা স্থানীয় রাখতে চাই। এটা আমাদের চাওয়া, পুরোটাই বিদেশি ভালো ধারাভাষ্যকার রাখার ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা চাই স্থানীয়দের স্লট যেন অর্ধেক থাকে।”
“কোভিড পরিস্থিতিতে লোক (ধারাভাষ্যকার) পাওয়াই কঠিন। তারপরও খারাপ থাকার কথা নয়। মোটামুটি ভালো মানেরই আসার কথা। তবে ওমিক্রন পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু সম্ভব হচ্ছে না।”
মজার ব্যাপার হলো, বিপিএলের এক সপ্তাহ পর শুরু হবে যে টুর্নামেন্ট, সেই পাকিস্তান সুপার লিগে প্রযুক্তি পুরোপুরি সব থাকছে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে ড্যানি মরিসন, ম্যাথু হেইডেন, গ্রায়েম স্মিথ, অ্যালান উইলকিন্স, কেপলার ওয়েসেলস, জন্টি রোডসরা থাকবেন বলে জানা গেছে। বিপিএল পিছিয়ে পড়েছে অনেক পরে সবকিছুর প্রক্রিয়া শুরু করাতেই।
ইসমাইল হায়দার মল্লিক সেই অভিযোগ কিছুটা মেনে নিলেন। সঙ্গে আবারও বললেন মহামারির কথা।
“আমাদের তো যোগাযোগ একটু পরেই করতে হয়েছে। কারণ সময়টা তো আমরা আগে ঠিক করতে পারিনি যে কখন হবে টুর্নামেন্ট। দেরিতেই সবকিছু শুরু করতে হয়েছে। এটা একটা কারণ তো অবশ্যই। তবে ওমিক্রন না থাকলে তো ঝামেলা হতো না।”
“ডিআরএস না থাকলে টুর্নামেন্ট অবশ্যই আবেদন হারায়। কিন্তু কিছু করার নেই। দর্শকের ক্ষেত্রেও যেমন, আমরা চেয়েছিলাম এবার পূর্ণ গ্যালারি রাখতে। সরকার থেকে অনুমতিও পেয়েছিলাম। কিন্তু সব বদলে গেল ওমিক্রনের কারণে।”