নারী ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার পর স্পেনের ফরোয়ার্ড জেনিফার হারমোসাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান লুইস রুবিয়ালেস। এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে।
সমালোচনার মুখে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন রুবিয়ালেস। কিন্তু তাতেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বরং চুমু-বিতর্কে মুখ খুলেছিলেন খোদ স্পেনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস। দেশটির সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী রুবিয়ালেসের পদত্যাগও দাবি করেছেন। এবার রুবিয়ালেসের শাস্তি দাবি করেছেন হারমোসা নিজেই।
হারমোসার পক্ষে রুবিয়ালেসের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছে তার অ্যাজেন্সি ও খেলোয়াড়দের সংগঠন ‘ফুটপ্রো’। এক যৌথ বিবৃতিতে হারমোসা বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন ফুটপ্রো ও আমার অ্যাজেন্সি টিএমজে আমার স্বার্থ রক্ষা করবে এবং এ ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাবে। ‘
এদিকে বিবৃতিতে ‘ফুটপ্রো’ বলেছে, ‘এ ধরনের আচরণ যেন শাস্তি এড়িয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এধরনের আচরণকে অগ্রহণযোগ্য মনে করি এবং নারী ফুটবলারদের রক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ‘
ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে নারী ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে স্পেনের প্রত্যেক ফুটবলারকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান রুবিয়ালিস। তবে হারমোসাকে তিনি শুধু জড়িয়েই ধরেননি, আচমকা তার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসেন। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় স্প্যানিশ ফুটবলে। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি হারমোসাও। ড্রেসিংরুমে ফিরে তিনি জানান, রুবিয়ালেসের আচরণ ভালো লাগেনি তার। এরপর থেকেই মূলত বিতর্ক ডালপালা মেলতে শুরু করে।
রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে স্পেনে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তার পদত্যাগের দাবির পাশাপাশি কঠোর শাস্তি দাবি করছেন অনেকে। যদিও নিজের অমন আচরণের কারণ হিসেবে বিশ্বকাপে জেতার পর মুহূর্তের উত্তেজনাকে দায়ী করেছিলেন রুবিয়ালেস। দোষ স্বীকার করে ক্ষমাও চান তিনি। কিন্তু তার যুক্তি ধোপে টেকেনি।
রুবিয়ালেসের মন্তব্যকে যথেষ্ট মনে করেননি স্পেনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী। তবে স্প্যানিশ ফুটবলের প্রধানকে বরখাস্ত করার এখতিয়ার নেই তার। কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন, এ ধরনের আচরণ কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। স্পেনের সেকেন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ইয়োলান্দা দিয়াজ থেকে শুরু করে স্প্যানিশ নারী শীর্ষ লিগ লিগা-এফ এর কর্তারাও রুবিয়ালেসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রো ফিফার আইন অনুযায়ী রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় আগামীকাল শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই রুবিয়ালেসকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
গোল করে স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতানোর পর পেলেন বাবার মৃত্যুর খবর
নারী ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। প্রথমবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পেল স্পেন।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি স্টেডিয়ামে স্পেনের ঐতিহাসিক জয়ে একমাত্র গোলটি করেন অধিনায়ক ওলগা কারমনা।
কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই উচ্ছ্বাসের আবহের স্পেনের অধিনায়ক পেলেন হৃদয়ভাঙার খবর। ম্যাচের আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তার বাবা।
মৃত্যুশয্যায় ওলগার বাবার পাশে পরিবারের কেউ-ই থাকতে পারেননি। ওলগার মাসহ পরিবারের সদস্যরা সবাই বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে স্পেন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। সেই সময় ওলগার বাবার মৃত্যু হয়।
ওলগার পরিবারের সদস্যরা বিশ্বকাপ ফাইনালের আগেই খবর পান। কিন্তু তারা ওলগাকে কিছু জানাননি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তারা এ খবর দেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালের পর রোববার স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন সামাজিক মাধ্যমে জানায় কারমনার বাবার মৃত্যুর খবর। সেখানে বলা হয়, রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে, ওলগা কারমনার বাবার মৃত্যুর খবর। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর খবরটি জানতে পেরেছেন এ ফুটবলার। এই গভীর দুঃখের সময়ে ওলগা ও তার পরিবারকে আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা তোমাকে ভালোবাসি ওলগা, স্পেনের ফুটবলে তুমি ইতিহাস।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওলগা জানিয়েছেন, আমি জানতাম না, বিশ্বকাপ ফাইনাল শুরু হওয়ার আগেই আমার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি, বাবা আমাকে অনন্য কিছু অর্জন করার শক্তি দিয়েছেন। আমি জানি, তুমি আমার খেলা দেখছিলে। তুমি আমার জন্য গর্বিত। শান্তিতে বিশ্রাম নাও বাবা।