একমেরু শাসন থেকে ছিটকে পড়ছে বিশ্বরাজনীতি। চলছে পালাবদলের খেলা। পশ্চিমা আধিপত্যকে ডিঙিয়ে নিজের অস্তিত্ব প্রচারে ফিরছেন বিরোধী বলয়ের রাজারাও।
বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে রাশিয়ার এ পদক্ষেপ ছিল আগে থেকেই। আর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ভাব-গাম্ভীর্য, শৌর্যবীর্যের ঝাণ্ডা তুলছে আঞ্চলিক ‘মুরুব্বিরাও’।
যুদ্ধ বন্ধের শামিয়ানা হাতে প্রথমেই শামুকের মতো ধীরে ধীরে পা খুলেছে তুরস্ক। তবে সবচেয়ে বড় চমক দেখাল চীন। প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। যুদ্ধের ডামাডোলে শান্তির ডানা মেলে উড়ে গিয়ে জুড়ে বসল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ারে। শত্রুর ছাউনি থেকে মিত্রের তাঁবুতে বসাল মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তি ইরান-সৌদি আরবকে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের পর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় চীনও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ১২ দফা ওই শান্তিপ্রস্তাব শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তিই নয় বরং মার্কিন মদদপুষ্ট পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে দূতালির বেশে চীনের শক্ত অবস্থানের জানানও বটে।
বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় এই দুই নেতা শি জিনপিংকে যুদ্ধ শেষ করতে মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগের আলোচনার ওপর জোর দেন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের চীনের পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ কিম মনে করেন, চীন রাশিয়াকে একটি উল্লেখযোগ্য মিত্র হিসাবে দেখার কারণ পুতিনকে পশ্চিমকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা ধ্বংসে সক্ষম মনে করা। আর এ কারণেই রাশিয়ার সাথে কৌশলগত অংশীদারত্বকে দ্বিগুণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
মধ্যপ্রাচ্যের সাথে চীনের সম্পর্ক বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বিনিয়োগকে ঘিরে। তবে গত কয়েক বছরে চীন তার রাজনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে কূটনৈতিক এজেন্ডাকেও শক্তিশালী করতে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ প্রকাশ করছে।
সৌদি আরব ও ইরানে সম্পর্ক উন্নয়নে বেইজিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বৈঠকের পর শুক্রবার সৌদির রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালমান আল-আনসারি আরব নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে চীনের নতুন ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। শুধু সৌদি ইরান নয়, ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও ভূমিকা রাখতে আগ্রহী চীন।
আল আনসারির মতে, চীন মধ্যপ্রাচ্যকে তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করে। প্রথমত, চীনের জ্বালানি আমদানির ৪০ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। দ্বিতীয়ত, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সৌদি আরব ও ইরানের মধ্য দিয়ে যাবে। এ ছাড়া এসব শান্তি আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে শক্তিশালী হিসাবে নিজেকে প্রদর্শন করতে পারবে দেশটি।