অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে রেকর্ড: ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

সরকারি উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তাদের উদ্যোমের ওপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম মাইলফলক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ার অর্থ হলো অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব।
ব্যাংকাররা বলছেন, সংকটে পড়লে এ রিজার্ভ অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে কাজে দেবে। আমদানি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান দৈনিক বলেন, বছরের শেষ ব্যাংকিং দিবসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের অর্ধেকের বেশি। চলতি বছরে বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র অনুযায়ী, দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে। স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও ডলার এই তিন ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করা হয়। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচাও করে বাংলাদেশ।

অন্য সময় রিজার্ভ বাড়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি ভালো ভূমিকা পালন করলেও গত কয়েকমাস ধরে রপ্তানি বাণিজ্য অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। করোনার আগে থেকেই রপ্তানি বাণিজ্যে মন্দা যাচ্ছিল। করোনা আসার পর তা খুবই খারাপ অবস্থায় গেছে। অবশ্য গত জুলাই থেকে আস্তে আস্তে রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বেড়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ এক হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। রপ্তানির ইতিবাচক দিকও রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। আর রিজার্ভ বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে প্রবাসী আয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে দেশে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।

রিজার্ভ বৃদ্ধি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর। যা আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম মাইলফলক। করোনা মহামারির মধ্যেও রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রেমিট্যান্সের আন্ত:প্রবাহ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের এ অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *