১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে ২০২২। নর্দ্যাম্পটন থেকে হ্যামিল্টন। দুটি সময় আর দুই শহর একটা জায়গায় যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মিলে গেল এক বিন্দুতে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে গিয়ে বাংলাদেশের ছেলেদের প্রথম জয় ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, তবে ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়া দেয় তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে। এবার মেয়েদের দল প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে গিয়েও হারিয়ে দিল পাকিস্তানকে। দারুণ এই জয়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের মনে পড়ছে ছেলেদের সেই স্মরণীয় জয়ের কথা।
হ্যামিল্টনে সোমবার পাকিস্তানকে ৯ রানে হারানোর পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইতিহাস গড়ার আনন্দের কথা বলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ ফাহিমা খাতুন নিজের প্রতিক্রিয়া ও দলের উচ্ছ্বাসের কথা জানান পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে। পরে বিসিবির ভিডিও বার্তায় নিগার-ফাহিমা ও দলের আরও তিন সিনিয়র ক্রিকেটার নিউ জিল্যান্ড থেকে পাঠালেন তাদের আনন্দের বার্তা।
নিগার সুলতানা, অধিনায়ক, ব্যাটার ও কিপার
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স: ৪৬ রান
“বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের আনন্দ আসলে অন্যরকম। এখনও পর্যন্ত আমি মনে করি আলহামদুলিল্লাহ, এই জয়টা আমাদের অনেক প্রয়োজন ছিল। এই টুর্নামেন্টে একটা মোমেন্টাম দরকার ছিল, যেটা আমরা আজকে পেয়েছি।”
“আমার নিজের জন্য…বিশ্বকাপে দল প্রথম জয় পেয়েছে এবং আমি এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছি, এজন্য আমি অনেক গর্ববোধ করি। আশা করব ভবিষ্যতেও যেন আমরা এরকম জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি।”
রুমানা আহমেদ, লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স: ১৩ বলে ১৬ রান ও ২/২৯
“আমরা খুবই আনন্দিত। এই প্রথম আমরা বিশ্বকাপে এসেছি এবং তৃতীয় ম্যাচটি পাকিস্তানের সঙ্গে খুব ভালোভাবে জিততে পেরেছি। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে আমরা আমাদের ভাইদের মতো ইতিহাস রচনা করেছি। তারা যেমন তাদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল, আমরাও প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়লাভ করেছি।”
“এটা আমাদের জন্য, আমাদের ক্রিকেটের জন্য বড় একটা মাইলফলক হবে বলে আমি মনে করি। এই জয় নিয়ে সামনের ম্যাচগুলোর জন্য আরও আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে আমাদের। মেয়েরা আরও ভালো ক্রিকেট উপহার দেবে।”
জাহানারা আলম, পেসার
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স: ১/২০
“আজকের জয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং আমরা মনে করি, আমরা ইতিহাস গড়েছি। আমার বিশ্বাস, এতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমি মনে করি, মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য এটি একটি মাইলফলক। যেটা ১৯৯৯ সালে আইসিসি ট্রফিতে (বিশ্বকাপে) ছেলেদের দল করেছিল, ঠিক একই কাজ আমরা করেছি আমাদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে। এটা আসলেই একটা ইতিহাস ও মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য বড় পাওয়া।”
ফাহিমা খাতুন, লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স: ০ রান, ৩/৩৮, প্লেয়ার অব দা ম্যাচ
“খুবই ভালো লাগছে। সবসময় আমি একটা কথা বলে আসছি এবং দলের সবাই বলে আসছে যে, পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা সবসময় জেতার জন্যই খেলি। জেতার ক্ষুধাটা থাকে আমাদের। সেটাই আমরা আজকে চেষ্টা করেছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোনোর এবং যথাযথ কাজে লাগাতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত।”
“একটা সময় হয়তো বাইরে থেকে অনেকেই অনেক কিছু মনে করছিল যে ম্যাচ আমাদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। তবে আমার ও দলের বিশ্বাস ছিল… ওদের উইকেট না পড়লেও রান আমরা আটকে রাখতে পেরেছিলাম। সেটাই শেষ পর্যন্ত আমাদের কৃতিত্ব যে ওরা রানের চাপ নিয়ে মারতে গিয়ে আমাদের উইকেট দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জয়টা আমাদের দিকে এসেছে।”
ফারজানা হক, ব্যাটার
পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্স: ৭১ রান
“অবশ্যই জয় সবসময় আনন্দদায়ক ও খুশির একটা বিষয়। আমাদের সবার জন্য জয়টা দরকার ছিল। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে, সবাই মিলে যদি একসঙ্গে খেলতে পারি, জয়টা আমাদের জন্য সম্ভব হবে। কাজটা করতে পেরেছি বলেই জয়টা এসেছে।”
“পরের চার ম্যাচের জন্য এই জয় অবশ্যই আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করবে। আমরা সবাই যদি একে অপরের সঙ্গে মিলে জুটি গড়ে যার যার কাজ সুন্দরভাবে করতে পারি, অবশ্যই সামনেও ভালো হবে আমাদের।”