সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে কিডনি কেনাবেচার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে বাহিনীটি জানতে পেরেছে, আটককৃতরা কিডনি বিক্রির একটি চক্রের সদস্য, যারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে।
র্যাব জানায়, কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকাও দিত না চক্রটি। গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনি বাবদ ১৫-২০ লাখ টাকা নেওয়া হলেও ডোনারকে দেওয়া হতো ২ লাখ টাকার মতো। ঠকানো হতো গ্রহীতাকেও। এই চক্রের পাঁচ জনকে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কিডনি বিক্রি সিন্ডিকেটের অন্যতম মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ। অন্যরা হলো—মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু।
এ সময় তাদের কাছ থেকে কিডনি দাতাদের চারটি পাসপোর্ট, মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।
চক্রটির বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর র্যাব মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের প্রলুব্ধ করত। সেই সঙ্গে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছিল। তাদের কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছিল।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন এবং তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। র্যাব জানায়, চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।
দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হবার জন্য প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।
আর তৃতীয় গ্রুপটি ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে প্রতিবেশী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।
র্যাব জানায়, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে কিডনি ডোনারদের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করে। এরপর হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকত।
র্যাব জানায়, ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিত্সা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিত্সা সেবা’ নামক দুটি পেজের অ্যাডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে প্রতিবেশী দেশে পাচার করেছেন।