দু’জনের ভীষণ খুনশুটি। মনোমালীন্যও অবশ্য কম নয়।
পাগলের পাগলামিতে পাগলিটা হুটহাট রাগ করে। সেই রাগ ভাঙাতে গিয়ে পাগল কবিতা লেখে, পাগলিকে ভালোবেসে হয়ে যায় কৃষ্ণ, রোমিও, অ্যান্টোনি, ত্রিস্তান। কখনওবা অরফিয়াস, মজনু, সেলিম বা শাহজাহান। কম যায় না পাগলিও। যুগে যুগে সেও রাধা, জুলিয়েট, ক্লিওপেট্রা, আইসোলেইড, ইরিডাইস, আনারকলি বা মমতাজ। কিংবা কারারক্ষীর সেই অন্ধ মেয়েটি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে যার জন্য প্রেমিক ভ্যালেন্টাইন রেখে যায় অমর চিঠি।
এরপর কতো বসন্ত, কত ফাল্গুন কেটে গেলো! পাগলিরা পাগলরূপী ‘ভ্যালেন্টাইন’র কাছ থেকে চিঠি পেতেই থাকলো, পেতেই থাকলো। সেই চিঠি প্রেমের, ভরসা আর ভালোবাসার। সে চিঠি পড়লে যেমন প্রতিশব্দে হৃদয়ের জানলা খুলে যায়, তেমনি একটা মস্ত আকাশ গিয়ে ওড়ে পুরো বুকের ভেতর। আরও কত কথা, কত শব্দ। তবে চিঠির শেষ লাইনে খুব যতনে একটি কথাই লেখা, ভালোবাসি…।
বসন্তের পাতাঝরা ঝিরঝির বাতাসে আজ হারিয়ে যাবে প্রেমিকযুগল। সব আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার গভীরতা। উতলা হাওয়ার এমন দিনে মনের মানুষটির দিকে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে বলবে, ‘ভালোবাসি, আমি তোমায় ভালোবাসি। ’ ও প্রান্ত থেকে হয়তো কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। হয়তো সে চুপ করে থাকবে। হয়তো সব জড়তা ভেঙে বলতেও পারে, ‘আমিও ভালোবাসি। ’ আজ ভালোবাসার জয় হবেই। আজ যে ভালোবাসার দিন, ভ্যালেন্টাইন ডে।
অনেকের জন্য যেমন আজকের কোনো একটা সময় হবে ভালোবাসার প্রথম প্রহর, তেমনিভাবে অনেকে উদযাপন করবেন একসঙ্গে পথচলার দিন। দু’জনের পদচারণায় মুখর থাকবে শহরের নানা পথ-প্রান্তর। দু’জনে দু’জনার হাত ধরে ঘুরবে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত। ফুল আর উপহারসামগ্রীর দোকানে জমেবে ভিড়। ফাল্গুনের বাহারি রঙে ফুল প্রিয় মানুষটি তুলে দেবে প্রিয় মানুষের হাতে। প্রেমিকের হাত হয়ে প্রেমিকার সুবিন্নস্ত খোঁপায় উঠবে লাল গোলাপ।
ভ্যালেন্টাইন ডে’তে তারুণ্যেরই জয়জয়কার দেখা যায়। আর দিবসটির মাধ্যমে মূলত প্রেমিক-প্রেমিকা বা মানব-মানবীর চিরায়ত প্রেমকেই বোঝানো হয়ে থাকে। তবে ভালোবাসা প্রকাশের আলাদা কোনো দিনক্ষণ না থাকলেও নিজের প্রিয় মানুষটিকে অন্তত একবারের জন্য হলেও ‘ভালোবাসি’ বলতে এই দিনটিকে বেছে নেন অনেকেই। তাইতো এই দিনে নির্দ্বিধায় প্রিয় মানুষটাকে বলে ফেলা যায়- ‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরও মন্দিরে’; অথবা ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না’।
ভালেন্টাইন ডে আমাদের দেশে এখন ঘটা করে পালন করা হলেও এটি এসেছে পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতি থেকে। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রেয়সীকে লিখে গিয়েছিলেন ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। তারই ধারাবাহিকতায় আজও প্রতিটি পাগলীর জন্য পাগলেরা চিঠির শেষে একটি কথাই লেখে, ‘ভালোবাসি…’! যেখানেই যাক, যেভাবেই থাক, না থাকলেও দূর থেকে ধ্বনি তুলবে- ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি’।