১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শুধু ঢাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক থেকে জানা যায়, সেদিন প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ঐ কর্মসূচি পালন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ এই প্রদেশের বর্ণভাষার আত্মনিয়ন্ত্রণের ওপর খাজা নাজিমুদ্দিনের স্বেচ্ছাচারী আক্রমণের প্রতিবাদে শুধু একটা ছাত্র-হরতালের মহড়ার আহ্বান করিয়াছিল। সেই মহড়াই প্রদেশের সর্বত্র শোভাযাত্রা ও সংগঠনে রূপান্তরিত হইয়াছে।’
৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছিল ২১ ফেব্রুয়ারির প্রতিবাদ-দিবস পালনের প্রস্তুতি। অলি আহাদের এক লেখা থেকে জানা যায়, ৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবির অফিস ১৫০ মোগলটুলিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভা অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজনে ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১২ ফেব্রুয়ারি কোনো কর্মসূচি না থাকলেও টানা তিন দিন ধরেই চলে এ কর্মসূচি। এতে টাকা খুব বেশি সংগ্রহ না হলেও পতাকা দিবসকে সামনে রেখে আরো নতুন নতুন কর্মী এসে যুক্ত হতে থাকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। সে সময় ৫০০ পোস্টার লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নাদিরা বেগম ও ডা. সাফিয়াকে। তারা তাদের বান্ধবী ও অন্যান্য ছাত্রীদের নিয়ে পোস্টার লেখার ব্যবস্থা করেন।
২১ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভের প্রস্তুতি কেবল ঢাকা শহরে নয়, সমগ্র পূর্ব বাংলায় চলতে থাকে। ৫ ফেব্রুয়ারি নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের জরুরি অধিবেশন হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনার জন্য ছাত্রসমাজের প্রতি আবেদন জানানো হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে সভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু স্থানে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ টানাটানি চলে এই ধর্মঘট পালন নিয়ে। মাদারীপুরের ছাত্রছাত্রীরা ধর্মঘট ও মিছিল করে।
বরিশালের রাজাপুর নিজামিয়া হাইস্কুলের ছাত্ররা কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বানে এ হামিদের সভাপতিত্বে সভা করে। নীলফামারীতে হরতাল পালিত হয়। সাধারণ জনগণ ও ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহরে মিছিল করে। খয়রাত হোসেন, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, জবানউদ্দিন আহমদ মিছিলের পুরো ভাগে ছিলেন। ছাত্র জাকিউল আলমের সভাপতিত্বে বিরাট জনসভা হয়। খয়রাত হোসেন ছাড়াও ছাত্রনেতা সুফিয়ার, এনায়েতুর রহমান, আনোয়ার, সুফিয়া, ফিরোজা বেগম ও রাহেলা বক্তৃতা করেন।