রান্না করা মাংস ফ্রিজে রাখার আগে ছোট টুকরা করে নিতে হয়।
কাঁচা বা রান্না করা- মাংস যদি সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করা না হয় তবে সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর বাজে খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার কোনো মানে হয় না।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি)’র পরামর্শ হল- রান্না করা যে কোনো মাংস খাওয়ার পর বেচে গেলে অবশ্যই ছোট টুকরা করে রেফ্রিজারেইটরে রাখতে হবে। না হলে নষ্ট হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।
এছাড়া বেচে যাওয়া খাবার দুই ঘণ্টার মধ্যে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। বেশি গরম অর্থাৎ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে থাকার পর রান্না খাবার ফ্রিজে রাখতে হবে এক ঘণ্টার মধ্যে।
বেশি দিন ফ্রিজে রেখে রান্না করা মাংস খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে সেই পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে।
কারণ ‘ইউ.এস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’য়ের তাথ্যানুসারে, ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হলেও রান্না-মাংস বেশি দিন ফ্রিজে ঠিক থাকবে না। রান্না করা মাংস ও হাঁস-মুরগি ফ্রিজে ভালো থাকবে তিন থেকে চার দিন। তবে যত কম সময়ের মধ্যে খাওয়া যাবে, ততই মঙ্গল হবে।
ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি
কাঁচা মাংস ফ্রিজে রাখার আগে অবশ্যই কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে।
এই বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)’য়ের পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার এবং বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব ডায়াটিকস অ্যান্ড নিউট্রিশন (বিএডিএন)’য়ের নির্বাহী পরিচালক ডা. সাজেদা কাশেম জ্যোতী বলেছিলেন-
“এক বছর পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজের তাপমাত্রা থাকতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাসাবাড়িতে থাকা ফ্রিজগুলোতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা করার সুবিধা থাকে না। সেক্ষেত্রে মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস রাখলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
আর মাংস রাখার পর ফ্রিজ যতটা সম্ভব কম খোলার চেষ্টা করতে হবে।
আরেকটি প্রতিবেদনে রন্ধনশিল্পী ও গৃহিনী সাইমা ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
– প্রথমেই ফ্রিজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার থাকা খুবই জরুরি। ফ্রিজে আগের মাছ ও মাংসের কারণে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
– মাংস সংরক্ষণের আগে অবশ্যই ভালোভাবে রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধোয়ার পর অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য বড় ঝুড়িতে রেখে দিন। মাংস থেকে পানি ঝরে গেলে পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে রেখে, ভালোভাবে মুখ পেঁচিয়ে বা বন্ধ করে ফ্রিজে রাখতে হবে।
– কোরবানির তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। এই সময় মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো। পরে খানিকটা নরম হলে মাংস সংরক্ষণ করতে হবে।
– ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য মোটা ও ভালো মানের পলিথিন বেছে নেওয়া উচিত। একেকটি মাংসের প্যাকেট রাখার সময় মাঝে মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে একটি মাংসের প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
– মাংস সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই নতুন ও পরিষ্কার প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। পুরানো বা আগের ব্যবহৃত পলিথিন ব্যবহার করলে মাংস গন্ধ হয়ে যেতে পারে।
– ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।
অন্যান্য পদ্ধতি
ফ্রিজ ছাড়াও অন্য পন্থায় মাংস সংরক্ষণ করা যায়। এই বিষয়ে গৃহিনী তানজিন চৌধুরী জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি পদ্ধতি।
- মাংস কেটে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা বেশি করে দিয়ে ডুবানো তেলে মাংস ছেড়ে দিন। ভালোভাবে সেদ্ধ করুন, যাতে মসলা মাংসের ভেতরে ঢোকে। তবে খেয়াল রাখবেন, মাংস যাতে নরম হয়ে না যায়। একদিন অন্তর মাংসগুলো গরম করুন। এতে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
- মাংস লম্বা লম্বা করে টুকরো করুন। এরপর লবণ, হলুদ মেখে রোদে শুকিয়ে নিন। এটি তেলে ভেজেও খেতে পারেন। তবে রান্নার আগে মাংসগুলো ভিজিয়ে নিন।
- এ পদ্ধতিতে মাংসের টুকরোগুলো কাঁটাচামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে নিন। এরপর লবণ ও লেবুর রসে ডুবিয়ে নিন, যাতে ভালোভাবে এই মিশ্রণ মাংসের ভেতরে ঢোকে। এভাবে রাখলেও মাংস অনেক দিন ভালো থাকে।
- সিরকা বা ভিনেগারে ডুবিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। প্রথমে দুতিন কেজি মাংসে ৪ টেবিল-চামচ বিট লবণ ও ৪ টেবিল-চামচ বাদামি চিনি মাখিয়ে নিতে হবে। পরে ১ লিটার সিরকা বা ভিনেগারে মাংস পুরোপুরি ডুবানো অবস্থায় ঢেকে রেখে দিতে হবে। তবে এক বছরেরর মধ্যেই এই মাংস খেয়ে ফেলতে হয়।