আন্তর্জাতিক

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কে এই তুলসি গ্যাবার্ড ?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর যে কয়েকটি নাম আলোচনায় তাম্মধ্যে তুলসি গ্যাবার্ড অন্যতম।

দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরবর্তী প্রধান হিসেবে এই নারীকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।

যথাযথ কারণেই কৌতূহল বেড়েছে গোটা বিশ্বের। কে এই তুলসি গ্যাবার্ড? যার হাতে গোয়েন্দা সংস্থাকে ন্যস্ত করেছেন ট্রাম্প।
কেননা, গোয়েন্দা বিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা নেই তুলসির। তারপরও সংস্থাটির প্রধান করা হলো তাকে।

তুলসি গ্যাবার্ড একজন কট্টর ট্রাম্প সমর্থক, তা জানা সবার। হাওয়াই রাজ্যের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান তিনি।

নাম ভারতীয় হলেও ভারতের সঙ্গে তুলসির বংশগত কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি মূলত আমেরিকান হিন্দু। মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে প্রথম হিন্দুও তিনি।

তুলসির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায়। বর্তমানে তার বয়স ৪৩ বছর। তিনি ২১ বছর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। ওই সময় হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন।

তুলসি গ্যাবার্ড হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য। হাওয়াইয়ে তুলসির এই জনপ্রিয়তার কারণ তার বাবা বাবা মাইক গ্যাবার্ড । হাওয়াই স্টেট সিনেটর ছিলেন মাইক, যিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে যোগদান করেন।

২০১২ সালে ১১৩ তম কংগ্রেসে রিপাবলিকান কাওভিকা ক্রাউলিকে হারিয়ে ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন তুলসি। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০৩ ভোট (৮০.৬ শতাংশ) এবং ক্রাউলি পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৭০৭ ভোট (১৯.৪ শতাংশ)।

এর মাধ্যমে প্রথম হিন্দু হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন তুলসি। শুধু তাই নয়; প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হিসেবে কংগ্রেসের সদস্য হন।

তুলসি সনাতন ধর্মাবলম্বী। প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন তিনি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। ’

তুলসি ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। তবে এর দুই বছর পরই তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করেন। ডেমোক্র্যাটদের ওপর ‘অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী’ অভিযোগ এনে তিনি দল ছাড়েন। সেসময় তিনি দাবি করেছিলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ‘উইওক’ মতবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।

এরপর তুলসি ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে কলেজ টিউশন এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো উদারনৈতিক কারণগুলো তুলসীর ভূমিকা রয়েছে।

তুলসি গ্যাবার্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তবে আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল তিনি। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন।

আর সেই তুলসিকেই কিনা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বেছে নিলেন ট্রাম্প!

তাকে নির্বাচন করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুলসি আমেরিকানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি উভয় দলেই ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, এখন তিনি গর্বিত রিপাবলিকান!’

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসি গ্যাবার্ড ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন এবং ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট তদারকি করবেন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা যেমন সিআইএ, এফবিআই এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) থাকবে তার তত্ত্বাবধানে।

এদিকে এমন পদে তুলসির মনোনয়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

তার নিয়োগ বিষয়ে এক্স-এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমোক্র্যাটিক ভার্জিনিয়া কংগ্রেসওম্যান সদস্য অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার বলেছেন, ‘জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসি গ্যাবার্ডের মনোনয়নে আমি হতবাক। কারণ, তিনি শুধু অযোগ্যই নন এই পদের জন্য প্রস্তুতও নন। বাশার-আল-আসাদ এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মতো স্বৈরশাসকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগীপ্রবণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *