দুটি ট্রেনিং ক্যাম্প, বাংলাদেশের মতো উইকেট তৈরি করে অনুশীলন, কত কিছুই না করে এই সফরে এসেছে নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু প্রস্তুতি আর বাস্তবতার ফারাক কতটা, বুঝে গেল তারা প্রথম ম্যাচেই। মন্থর, টার্নিং ও অসমান বাউন্সের উইকেটে কিউই ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল বাজেভাবে। বাংলাদেশ পেল টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৭ উইকেটে।
ব্যাটিংয়ের জন্য ভীষণ দুরূহ উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড গুটিয়ে যায় স্রেফ ৬০ রানেই। এই সংস্করণে যা তাদের যৌথভাবে সর্বনিস্ন স্কোর, বাংলাদেশের বিপক্ষে সব দল মিলিয়েই সর্বনিম্ন। এই রান তাড়ায়ও অবশ্য বাংলাদেশকে খেলতে হয় ১৫ ওভার।
খুবই মন্থর, টার্নিং ও ব্যাটিং প্রতিকূল উইকেটে এই ম্যাচ টি-টোয়েন্টির আদর্শ বিজ্ঞাপন নয়। তবে বাংলাদেশের আপাতত আপত্তির কারণ নেই!
দিন দুয়েক আগে বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, এই সিরিজে ১৫০-১৬০ রানের উইকেট চাওয়া থাকবে তার। কিন্তু উইকেট দেখা গেল অস্ট্রেলিয়া সিরিজের চেয়েও ব্যাটিং প্রতিকূল! কিউই ব্যাটসম্যানরা বেশি ভুগেছে বল অনেক গ্রিপ করায়।
প্রথম ওভার থেকেই সেই ভোগান্তির শুরু। নিউ জিল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের সেরা প্রতিভা বলে বিবেচিত রাচিন রবীন্দ্র আন্তর্জাতিক অভিষেকে ফেরেন ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়ে। শেখ মেহেদি হাসানের গ্রিপ করা বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এই দৃশ্য একটু পরই হয়ে ওঠে নিয়মিত। তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে সাকিব আল হাসান ফেরান উইল ইয়াংকে। চতুর্থ ওভারে নাসুম আহমেদের শিকার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও টম ব্লান্ডেল।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার চার ওভারের মধ্যে চার উইকেট পায় বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ড লড়াইয়ের শুরুতেই প্রায় ধ্বংসস্তুপ।
৯ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন দুই বাঁহাতি টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস। খর্বশক্তির এই নিউ জিল্যান্ড দলের মূল ভরসা এই দুজনই। ভালো একটি জুটি গড়ার ইঙ্গিতও দেন দুজন এক-দুই করে রান বাড়িয়ে।
কিন্তু স্পিন মোটামুটি সামলে দুজনই আউট হন পেসার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে, দুজনই থামেন ১৮ রানে। শর্ট বল পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন অধিনায়ক ল্যাথাম, স্লোয়ারে উড়িয়ে লং অনে ক্যাচ দেন নিকোলস।
এই দুজনের পর আর সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি কেউই। শেষ দিকে এসে দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে লেজ ছেটে দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
১৬.৫ ওভারেই শেষ হয় নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি কেবল ৩টি!
রান তাড়ায় বাংলাদেশ দুই ওপেনারকে হারায় দ্রুত। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ব্যর্থ মোহাম্মদ নাঈম শেখ আলগা শটে ফেরেন ১ রানে। এজাজ প্যাটেলের টার্নে পরাস্ত হয়ে ১ রানেই বিদায় নেন দলে ফেরা ওপেনার লিটন।
তবে বাংলাদেশের জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি কখনোই। তিনে নেমে সাকিব ৩৩ বলে করেন ২৫। রবীন্দ্রকে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট দিয়ে সাকিব ফিরলেও মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ ফেরেন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে।
২ উইকেটের সঙ্গে ২৫ রান করে ম্যাচের সেরা সাকিব।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ১৬.৫ ওভারে ৬০ (ব্লান্ডেল ২, রবীন্দ্র ০, ইয়াং ৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ১, ল্যাথাম ১৮, নিকোলস ১৮, ম্যাকনকি ০, ব্রেসওয়েল ৫, এজাজ ৩, টিকনার ৩*, ডাফি ৩; মেহেদি ৪-০-১৫-১, নাসুম ২-০-৫-২, সাকিব ৪-০-১০-২, মুস্তাফিজ ২.৫-০-১৩-৩, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৮-০, সাইফ ২-০-৭-২)।
বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ৬২/৩ (নাঈম ১, লিটন ১, সাকিব ২৫, মুশফিক ১৬*, মাহমুদউল্লাহ ১৪*; এজাজ ৪-০-৭-১, ম্যাকনকি ৪-০-১৯-১, রবীন্দ্র ৪-০-২১-১, ডাফি ১-০-৩-০, ব্রেসওয়েল ১-০-৩-০, টিকনার ১-০-৯-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।