খেলাধুলা

মিরাজের ঘূর্ণিতে বড়দিনে বড় জয়ের হাতছানি

শনিবারের বিকাল হঠাৎ মনোরম হয়ে উঠল মিরপুরে। মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ভীষণরকম চাপে পড়ে গেল ভারত। চার উইকেটের তিনটিই নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

এরমধ্যে কোহলির ‘বিরাট’ উইকেটও রয়েছে। এজন্য মিরাজের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত মুমিনুলকে। শর্ট লেগে নিচু ক্যাচ নিয়ে মুমিনুল মোক্ষম উইকেট নিতে সহায়তা করেছেন মিরাজকে। কোনো সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয়দিন বিকালে ভারত যে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে, তার নাম মিরাজ।

আজ ঢাকা টেস্টের চতুর্থদিনও যদি মিরাজ-রাজ অব্যাহত থাকে, সিরিজে সমতা আনতে বেগ পেতে হবে না বাংলাদেশকে। মিরপুরে অভাবনীয় জয়ের যে পটভূমি তৈরি হয়েছে, তার মূলে রয়েছেন মিরাজ।

ভারতের অপর উইকেট নেন সাকিব। তৃতীয় ওভারে দুই রানে ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে। আজ চতুর্থদিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছয় উইকেট। ভারতের দরকার আরও ১০০ রান।

শেষ রোমাঞ্চের অপেক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে। বড়দিনে মিরপুর অপেক্ষায় থাকবে বড় দলের বিপক্ষে বড় জয়ের। এর আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে ২৩১ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৭ এবং ভারত ৩১৪ রান করে।

তৃতীয়দিনের খেলা তখন তিন ওভার বাকি। তার আগেই মিরাজের ঘূর্ণির শিকার হলেন বিরাট কোহলি। বাঁধভাঙা উদযাপনে মাতোয়ারা মিরপুর স্টেডিয়াম। ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে গিয়েও মাঝপথে থামলেন কোহলি। ডাকলেন সাকিবকে। হয়তো তাকে কেউ কটু কথা বলেছে। সেটি শুনতে পেয়েছেন ভারতের মহাতারকা।

মিরাজকে দেখিয়ে সাকিবের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, কি বলেছে সে? সাকিব কিছু একটা বুঝিয়ে দিলেন। কোহলি রাগান্বিত হয়ে কিছু একটা বলতে বলতে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। তার বিদায়ের পর শেষ তিন ওভার কাটিয়ে দিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল ও জয়দেব উনাদকাট। এদিকে দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখলেন ভারতের ডান-হাতি পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। লিটন দাসও জানালেন, এই ম্যাচ জেতা উচিত বাংলাদেশের।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের টপঅর্ডারে কেউই বাংলাদেশের স্পিনারদের সামলাতে পারেননি। লোয়ার অর্ডারের অক্ষরকে উপরে এনে যে বাজি ধরতে চেয়েছিল সরকারীরা, তাতে অনেকটা সফল হয়েছে তারা। ভারতের প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে একমাত্র প্যাটেলই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন। ৫৪ বলে ২৬ রানে অপরাজিত প্যাটেলের সঙ্গে উনাদকাটকে নাইটওয়াচম্যান হিসাবে পাঠানো হয়। আট বলে জয়দেব করেছেন ৩* রান।

প্রথম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট পান সাকিব। ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে (২) উইকেটের পেছনের ক্যাচ বানান তিনি। টানা সাত ওভার আক্রমণে থাকেন সাকিব ও তাইজুল। অষ্ঠম ওভারে মিরাজকে আনতেই স্বাগতিকরা পায় দ্বিতীয় সাফল্য। নুরুল হাসান সোহানের অসাধারণ স্টাম্পিংয়ে ফেরেন চেতেশ্বর পূজারা (৬)।

দুই বাঁ-হাতিকে বোলিংয়ে দেখে ভারত প্যাটেলকে চারে নামায়। ওপেনার শুবমান গিলকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। ৩৫ বলে তিনি করেন মাত্র সাত রান।

অথচ, দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল বিভীষিকাময়। আগেরদিন যে স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিল স্বাগতিকরা, সেটা ধরে রাখতে পারেনি। সফরকারীদের বোলিং তোপে ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে প্রথম সেশনে চার উইকেট হারালে লিড নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা জাকির হাসান পরের টেস্টে পেলেন ফিফটি। কিন্তু ফিফটির পরই জাকির বিদায় নিলে আবার চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।

লিটন ও নুরুল হাসান সোহান দুজনই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কিছু রান বাড়ান। নুরুল হাসান ২৯ বলে ৩১ রান করার পর স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫তম হাফ সেঞ্চুরির পর লিটন ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ এক সুইংয়ে। ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে। ৯৮ বলে সাত চারে ৭৩ রান করেন লিটন।

লিটনের বিদায়ের পর তাসকিনের আরও কিছু রানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়। তাসকিন অপরাজিত থাকেন ৩১ রানে। প্যাটেল তিনটি এবং সিরাজ ও অশ্বিন দুটি করে উইকেট নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *