দেশের ইতিহাসবিজড়িত বিভিন্ন জনপদের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিজেপি নেতার করা একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিমকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি এম ভি নাগরত্ন আবেদনকারীকে জানিয়ে দেন যে ভারত এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
আবেদনকারী বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়কে নিশানা করে সারা দেশকে অগ্নিগর্ভ করে তুলবেন না। অতীত খুঁড়তে যাবেন না। এমন কিছু করবেন না, যা বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
ভারতের একাধিক ঐতিহাসিক শহর, নগর, জনপদ ও সড়কের নাম বদলানো শুরু হয়েছে। কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ শহরের নাম বদলে ‘প্রয়াগরাজ’ রাখা হয়েছে। মোগলসরাই জংশনের নাম পাল্টে হয়েছে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায়’।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের দুই ঐতিহাসিক শহর ঔরঙ্গাবাদ ও ওসমানাবাদের নাম বদলে যথাক্রমে ‘ছত্রপতি শম্ভাজিনগর’ ও ‘ধারাশিব’ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি নাম বদল কমিশন গড়ার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থ মামলাটি করেন।
আবেদনে বলা হয়, আক্রমণকারী মোগলদের নামে যা কিছু রয়েছে, তা বদলানো প্রয়োজন। কারণ, বহু জায়গায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। লোধি, গজনি, ঘোরির নামে রাস্তা আছে অথচ পান্ডবদের নামে কোনো রাস্তা নেই। এসব আক্রমণকারীর সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই।
জবাবে বিচারপতিরা বলেন, ‘আমাদের দেশে বারবার বিদেশি শক্তি হানা দিয়েছে। এটা সত্যি। কিন্তু সেটাও ইতিহাসের অঙ্গ। সেই ইতিহাস জনপদ, রাস্তা বা সৌধের নাম পাল্টে মুছে ফেলা যায় না।’ বিচারপতিদের প্রশ্ন, ‘আমাদের দেশে কি আর কোনো সমস্যা নেই?’
বিচারপতি জোসেফ আবেদনকারীকে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের বই পড়ে দেখার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, এ ধরনের উসকানিমূলক মামলায় দেশের সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা হলে শীর্ষ আদালত চুপ করে থাকবেন না।
বিচারপতিরা বলেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এ ছাড়া হিন্দু কোনো ধর্মবিশেষ নয়। এটা এক জীবনধারা। এই ধর্মে গোঁড়ামির স্থান নেই। বিচারপতিরা বলেন, দেশের ইতিহাস যেন কোনোভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বোঝা না হয়ে ওঠে।