গত প্রায় দুই যুগে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ (প্রাকৃতিক বন) সম্পদের মূল্য লাফিয়ে বেড়েছে। এ খাতে সম্পদ মূল্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় শীর্ষে চীন এবং ভিয়েতনাম দ্বিতীয়।
বিশ্বব্যাংকের বুধবার প্রকাশিত ‘দ্য চেঞ্জিং ওয়েলথ অব নেশন-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশের মোট সম্পদের একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ, উৎপাদিত সম্পদ ও বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো ম্যানগ্রোভ এবং সমুদ্রের মৎস্যকে প্রাকৃতিক সম্পদে জন্য হিসাব করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৬৫ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৫ টাকা।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মাথাপিছু সম্পদের মধ্যে উৎপাদিত সম্পদের বাজারমূল্য ৫ হাজার ৩৪৬ ডলার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য ২ হাজার ১৬৭ ডলার। এ ছাড়া বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাষযোগ্য জমি রয়েছে, তার মাথাপিছু আর্থিক মূল্য ১ হাজার ৫০১ ডলার ও মানবসম্পদের মূল্য মাথাপিছু ১২ হাজার ৯৩৪ ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য ১৯৯৫ সালে ২০৪ কোটি ডলার থেকে ২০১৮ সালে বেড়ে এক হাজার ২২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ ২৩ বছরে এ খাতে সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪০২ শতাংশ। একই সময়ে চীনে ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭৬৭ শতাংশ।
আর ভিয়েতনামে ৫৯১ শতাংশ। এছাড়া জাপানে ৩১১ শতাংশ, তাইওয়ানে ২৬৭ শতাংশ, ভারতে ১৯৪ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ১৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ম্যানগ্রোভের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতে সুরক্ষার থাকা অন্যান্য সম্পদের দামও বেড়েছে। হেক্টর প্রতি বার্ষিক ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য ২৩ বছরের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও তাইওয়ানে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এসব দেশে ম্যানগ্রোভের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত সম্পদের মূল্য বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বন্যা সুরক্ষার জন্য ম্যানগ্রোভের মূল্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। মূল্য পরিবর্তন নির্ভর করে ম্যানগ্রোভের পরিমাণ, বন্যার ঝুঁকি এবং বন্যার কারণে ক্ষতির ঝুঁকিতে উৎপাদিত সম্পদহ বিভিন্ন কারণের ওপর।
যেমন-একটি দেশে বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন থাকতে পারে, কিন্তু যদি সেই বন বন্যার ঝুঁকি থেকে অনেক বেশি সম্পদ রক্ষা না করে, তবে সেটির মূল্য একটি ছোট ম্যানগ্রোভ বনের চেয়ে কম হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য সামগ্রিকভাবে ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ম্যানগ্রোভ বনগুলো উপকূলীয় উন্নয়নের জন্য হুমকির সম্মুখীন।