জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে জমে ওঠেছে ফুলের বেচাকেনা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ বাজারে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম।
আজ “ভালবাসা দিবস”, সামনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস,বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ফুল বেচা-কেনায় ব্যস্ত ফুল চাষি- ক্রেতারা। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ১০মাস ফুলের বেচাকেনায় মন্দাভাব ছিল বলে জানান ফুলচাষিরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের বেচাকেনা জমে ওঠেছে গদখালিতে। রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ফুল ক্রেতারা গদখালিতে এসে ফুল কিনছেন। সারা বছর ফুলচাষিরা ফুল বিক্রি করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসব। এছাড়া বাংলা নববর্ষেও ফুলের জমজমাট বেচাকেনা হয়ে থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গদখালি, পানিসারা ও মাগুরা এলাকায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, রডস্টিক, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১২ ধরনের ফুল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,জেলার ৩ উপজেলায় ফুল চাষ হয়ে থাকে।এ জেলায় মোট ৬শ’৪০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে।এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ৬শ’৩০ হেক্টর জমিতে।ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা ও নাভারন ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া আরো ৪টি ইউনিয়নসহ হাড়িয়া, নীলকন্ঠ নগর, চাওরা, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, চাঁদপুর, বাইশা, কুলিয়া, পাটুয়াপাড়া, নারানজালি গ্রামসহ প্রায় ৫০টি গ্রামে ফুল চাষ হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। জেলার শার্শা উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ১ হেক্টরের সামান্য বেশি জমিতে।দেশের ফুলের মোট চাহিদার ৭০ভাগই যশোরের গদখালি ও শার্শা থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়।
গদখালি বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখানকার ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানী হচ্ছে।
নারানজালি গ্রামের ফুলচাষি আবু তাহের ও পাটুয়াপাড়া গ্রামের মুনজুর আলম জানান, তারা প্রত্যেকে এক একরের বেশি জমিতে ফুল চাষ করেছেন। বংলা নববর্ষসহ সামনের তিনটি উৎসবে তারা সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করে থাকেন।গদখালি বাজারের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী সেলিম রেজা ও জাহিদুল ইসলাম জানান,ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফুলের বাজার দর বেশ ভালো।চলতি মাসের বিভিন্ন উৎসবের আগে ফুলের দাম আরো বাড়বে।ফলে চাষিরা লাভবান হবে বলে তিনি জানান। গদখালি বাজারের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩ দিনে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। গদখালি বাজারের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, উৎসব এলে তিনি প্রতিদিন ঢাকা ও চট্রগ্রামে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি করে থাকেন।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান,ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারন ও মাগুরা ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়ে থাকে।এ চারটি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ফুল চাষি ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন।ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদর্শনীসহ ফুলচাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।