ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলা বাড়ার মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি ভার্চ্যুয়াল ভাষণে আরও সাহায্যের জন্য মরিয়া আবেদন জানিয়েছেন।
ইউক্রেইনের স্বাধীনতা রক্ষায় জেলেনস্কি তার দেশে আরও বিমান পাঠানোর আহ্বান জানান।
রাশিয়ার বিমান হামলার মুখে ইউক্রেইনকে প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি আবারও ‘নো-ফ্লাই জোন’ প্রতিষ্ঠার পুরোনো আর্জি জানিয়ে বলেন, “এই চাওয়া কি খুব বেশিকিছু?”
জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ার ভয়াবহ বিমান হামলার জবাব দেওয়া এবং নো-ফ্লাই জোন আরোপ করার অনুরোধ জানাচ্ছে ইউক্রেইন। রাশিয়া কেবল আমাদের দেশেই আক্রমণ করেনি, তারা আমাদের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে।”
পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনে নো ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে তাদের যুক্তি হল, এই ব্যবস্থা নেওয়া হলে রাশিয়ার সঙ্গে নেটোর সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।
তবে নো-ফ্লাই জোনে রাজি না হলেও নেটো দেশগুলো এ পর্যন্ত অস্ত্র ও মানবিক সহায়তাসহ অন্যান্য আরও সহযোগিতা, সমর্থন ইউক্রেইনকে করে আসছে।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ইউক্রেইনকে যে সহায়তা করেছে সেজন্য জেলেনস্কি তার কংগ্রেসের ভাষণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেন, “আমাদের আরও সহায়তা দরকার।”
ইউক্রেইনকে সাহায্য-সহযোগিতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ব্যক্তিগতভাবে জড়িত’ থাকারও কৃতিত্ব তাকে দেন জেলেনস্কি।
তবে তিনি কংগ্রেসকে আরওকিছু করা এবং রাশিয়ার সামরিক যন্ত্র থেমে না যাওয়া পর্যন্ত মস্কোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে থাকার আহ্বান জানান। রাশিয়ান ফেডারেশনের সব রাজনীতিবিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেন তিনি।
সব আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে রাশিয়ার বাজার অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “তাদের বাজার ছেড়ে দিন। কারণ, তারা আমাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।” রাশিয়ার আরও যেসব ফার্ম আছে সেগুলোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টির জন্যও মার্কিন আইনপ্রণেতাদেরকে আহ্বান জানান তিনি।
বিবিসি জানায়, জেলেনস্কির ভাষণের শুরুতেই মার্কিন কংগ্রেসে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এ সময় সবাই উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে সংবর্ধনা জানায়।
এরপর ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এই নগরী নিত্যদিনই ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমান হামলার শিকার হচ্ছে। কিন্তু এখনও এর পতন হতে দেয়নি। আমরা সেরকমটা এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারি না।”
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনই ইউক্রেইন সবচেয়ে বাজে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা রাশিয়ার আগ্রাসন ৮ বছর ধরে প্রতিহত করে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে সরাসরি এক আবেদন রেখে জেলেনস্কি তার বক্তব্য শেষ করেন। তিনি বাইডেনকে শান্তির নেতা হওয়ার আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি বলেন, “আপনার দেশে শান্তি কেবল আপনি এবং আপনার জনগণের ওপর নির্ভর করে না, বরং আপনার পাশে যারা আছে এবং যারা শক্তিশালী তাদের ওপরও নির্ভর করে।”
শক্তিশালী কথাটির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এ শব্দের মানে কেবল বিশালকায় কিংবা পরাক্রমশালী হওয়া নয়, বরং সাহসী হওয়া এবং নিজেদের ও বিশ্বের নাগরিকদের জীবনের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত থাকাকে বোঝায়।”
“ইউক্রেইনের জনগণ নিজেদের পাশাপাশি ইউরোপ এবং গোটা বিশ্বের মূ্ল্যবোধের জন্য লড়াই করছে”, বলেন জেলেনস্কি।