রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো যৌথ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে রাশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পুতিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বহু পুরনো। সমতা ও সম্মান এই সম্পর্কের ভিত্তি।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের প্ল্যান্টটির প্রথম ইউনিট এবং ২০২৬ সালে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। শিডিউল অনুযায়ী শেষ হবে এর নির্মাণকাজ। এখানে ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণই করে না। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পুরো লাইফ সাইকেলই আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সমর্থন করবো। পারমাণবিক জ্বালানির টেকসই সরবরাহ করা, কারিগরি সেবা, ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবস্থাপনা, স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বভার রাশিয়া গ্রহণ করেছে। রূপপুর প্রকল্পের সহযোগিতার কাঠামোতে রাশিয়া বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ তৈরি করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পারমাণবিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী বেশি। তাদের সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই প্রকল্প আমাদের দুই দেশেরই স্বার্থ রয়েছে যা পরস্পরের জন্য উপকারী। এটা সহযোগিতা আরও গভীর করেছে।
পুতিন বলেন, পাবনা জেলায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ২০১৩ সালে কাজ শুরু করেছে। ২০১৭ সালে পূর্ণমাত্রার গবেষণার কাজ শেষ হলে পদ্মার কূলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ঢালাই কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পুরো মেয়াদে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখছি। একই সময়ে দুটি ইউনিটের কাজ চলছে। যাতে ২৪০০ মেগাওয়াটের ক্ষমতাসম্পন্ন তিন ফ্লাক্স পর্যায়ের চুল্লি ব্যবহত হচ্ছে। আমরা প্রথম ইউনিটটির ফিজিক্যাল স্টার্টটা ২০২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৬ সালে শুরু হবে। প্রকল্পটি পূর্ণমাত্রায় চালু করার পরে এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ মেটাবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনও কার্বন নিঃসরণ করবে না। যা পরিবেশের জন্য খুব ভালো হবে। মানুষের স্বাস্থ্যের ভালো হবে, জনগণের ভালো হবে। এখানকার শ্রমিকেরা ভালোভাবে কাজ করছে। এখানে ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্মাণকাজে মালামাল সরবরাহ, পরিবহন ও অন্যান্য সেবার জন্য স্থানীয় কোম্পানি প্রকল্পের জন্য কাজ করছে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ভারতীয় বন্ধুরাও সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার নিয়ম ও সুপারিশ মেনে করা হচ্ছে। রূপপুরে নিরাপত্তা নির্ভরযোগ্য ও অত্যাধুনিক। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরবরাহের সনদ প্রদান দেওয়া হলো। এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মার্যাদা পাবে বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র৷
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, যার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ৫০ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর আমাদের দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মস্কোতে ঐতিহাসিক সফর করেন। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। আর শেখ হাসিনা তার পিতার কাজ সফলভাবে ও সম্মানের সঙ্গে অব্যাহত রেখেছেন। রাশিয়া-বাংলাদেশের বন্ধনের একটি উদ্যোগ হলো এই যৌথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা গভীর। অনেক ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে এই অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়। এর আগে রাশিয়া থেকে এই ইউরেনিয়াম গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছায়।