রাজনীতি

রাজপথে না থাকলে কঠোর ব্যবস্থা

রাজপথের কর্মসূচিতে সর্বস্তরের নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে বিএনপির হাইকমান্ড।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের কোনো নেতা সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলে তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নেওয়া হবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা।

ছাত্রদলের সভাপতিকে সরিয়ে দিয়ে সবাইকে দেওয়া হয়েছে এমন সতর্কবার্তা। তাই রাজধানীতে আজকের গণমিছিল নেতাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন দলটির অনেকেই। কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের উপস্থিতির দিকে নজর রাখবে হাইকমান্ড।

প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কেমন হয় সেটাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। গণমিছিলে অংশ না নিলে কিংবা কোনো ইউনিটের উপস্থিতি কম হলে তাদের তালিকা করা হবে। রাজপথের বিগত কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদীদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির দিন কিছু নেতার ভূমিকা ‘হাইকমান্ডের চোখ খুলে দিয়েছে’। দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতার কর্মকাণ্ড মোটেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি সক্রিয়দের মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে গণমিছিল হবে। এতে সর্বশক্তি দিয়ে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে মহানগর ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করেছে। সিনিয়র নেতারা উত্তর ও দক্ষিণের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই গণমিছিল থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই কঠিন সময়ের সম্মুখীন। এর থেকে কঠিন সময় কখনো আসেনি। সুতরাং দলে যারা সাহসিকতার সঙ্গে সামনে থাকবেন, তারা হবেন প্রকৃত নেতা, আগামী দিনের বিএনপির কাণ্ডারি। একজন যোগ্য নেতার আদর্শ, উদ্দেশ্য, সাহস এমনকি প্রয়োজনে দুঃসাহস থাকতে হবে। তার (যোগ্য নেতা) মূল পরীক্ষা হয় তখনই, যখন কঠিন সময় আসে। সুবিধাভোগী নেতাদের এখন আর কোনো সুযোগ নেই। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কারা সম্মুখভাগে সামনের দিনে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মোকাবিলা করছে।

তিনি জানান, বিএনপির প্রত্যেক কর্মী এখন নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযোগী। তাদের ত্যাগ, শ্রম আর কমিটমেন্টের কারণেই দল আজ এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। সুতরাং রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে সংগঠিত করা, সফল করার প্রচেষ্টাই করবেন তারা।

সূত্রমতে, ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাদের কার কী ভূমিকা তার একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যা পর্যালোচনা করছেন হাইকমান্ডসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেখানে সমন্বয়হীনতাকেই বেশি দায়ী করা হয়।

বিএনপির কিছু কেন্দ্রীয় নেতা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার শীর্ষ নেতা এবং অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ কয়েক নেতার দায়িত্ব অবহেলার কথা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের উঠে এসেছে। একই সঙ্গে ঢাকার অবস্থান কর্মসূচিতে যারা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের প্রশংসাও করেছে হাইকমান্ড। তাদের মূল্যয়নের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।

একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলায় পদ নেওয়ার পর অনেকেই আর কর্মসূচিতে সক্রিয় হন না। অনেকে সভা-সমাবেশে অংশ নিতে স্বাছন্দ্যবোধ করেন না। কিন্তু কোনো কর্মসূচি ঘিরে বিশেষ পরিস্থির সৃষ্টি হলে তাদের আর পাওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় ও ঢাকায় থাকা নেতাদের জেলার দায়িত্বে না দেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার হাইকমান্ডকে বলা হলেও তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ এসব নেতাদেরই মাঠের কর্মসূচিতে ভূমিকা নিতে দেখা যায় না।

গাজীপুর মহানগর ও জেলার উদাহরণ দিয়ে নেতারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ দুই জেলা শাখায় অনেক নেতাকর্মী থাকলেও নেতৃত্বের অভাবে তারা কাজ করতে পারছেন না। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে অনেকটা পকেট কমিটি বানানো হয়েছে। যে কারণে মাঠের সক্রিয় নেতাকর্মীরা কাজ করতে পারছেন না। মহানগরের দুই শীর্ষ নেতার বিরোধী একটি বড় অংশ রয়েছে। যাদের একেবারে ‘মাইনাস’ করা হয়েছে। আন্দোলন সফলে অন্তত পক্ষে ঢাকা মহানগরের আশপাশের জেলার প্রতি হাইকমান্ডের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রয়েছেন আড়াইশর ওপর। তাদের অধিকাংশই পদ নিয়ে বসে আছেন, কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না। এ ছাড়া সক্রিয়দের দিয়ে শূন্য পদ পূরণের কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। সামনে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে এসব ভুল-ত্রুটি নিয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্যই এক্ষেত্রে মাঠের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আজ গণমিছিল, পরীক্ষায় নেতারা : আজকের গণমিছিলকে কেন্দ্র করে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর। এ নিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে শুধু গণমিছিল নয়; আগামীতে যে কোনো কর্মসূচিতে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া কেন্দ্র থেকেও সতর্ক নজর রাখা হবে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। এছাড়াও আজকের কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত গণমিছিল করবে। একই সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গণমিছিল করবে কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত। উত্তরের গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নেতৃত্ব দেবেন দক্ষিণে। দুই গণমিছিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়েছে। কারা কোথায় থাকবেন তাও তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আজ ঢাকায় গণমন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ, এনডিএমসহ সমমনা রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি পালন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *