রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের বড় একটি অংশ উদ্ধারে নিউ ইয়র্কের আদালতে দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংক হেরে গেছে বলে ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট রায়ে ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই’ উল্লেখ করে তিন বছর আগে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মামলা খারিজ করে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে সাইবার হ্যাংকিংয়ের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ২০১৯ সালে এ মামলায় পক্ষভুক্ত ফিলিপাইনের একটি ক্যাসিনো মালিকের প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে দেশটির এনকোয়ারার ও ফিলস্টার সোমবার এ খবর প্রকাশ করেছে।
নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট গত ৮ এপ্রিল এ রায় দেয় বলে ব্লুমবেরি রিসোর্টু কর্প সোমবার ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জকে (পিএসই) অবহিত করেছে। সেখানে ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ারের অভাবে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা বাতিল করে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের আদালত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখের মধ্যে ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের জন্য ২০২০ সালে এ মামলা করেছিল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ মামলায় সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্টু কর্প, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্প (আরসিবিসি) এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করেছিল।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে।
রিজল ব্যাংকের এই শাখার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেররিজল ব্যাংকের এই শাখার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেরওই অর্থ স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।
রিজার্ভ চুরির তিন বছরের মাথায় ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলা পরিচলানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনরকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিপূরণ ও আদায়ে এ মামলা দায়ের করেছিল বলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময় মামলা নিষ্পত্তিতে তিন বছরের মত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
আজমালুল হোসেন জানান, মামলার ১০৩ পৃষ্ঠার এজাহারে ১৫ জন ব্যক্তি ও সাতটি প্রতিষ্ঠানকে এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনকে রাখা হয়েছে বিবাদীর তালিকায়।
এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
কয়েক বছর ধরে ‘জটিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে’ আসামিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে।
তিন বছর পরই গত ৮ এপ্রিল এ রায় হয় বলে জানায় এনকোয়ারার ডটকম। সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, আরসিবিসি ব্যাংকসহ ফিলিপাইনের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলায় অর্থ সরিয়ে নেওয়া/চুরি/অপব্যবহার, ষড়যন্ত্র ও প্রতারণায় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের পক্ষ থেকে তাদের দেশের আদালতে একটি মামলা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই মামলার রায়ে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাতেও তাকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে যে মামলাটি করা হয়েছিল, সেখানে সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ আদালতে এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেনি।