এক ওভারে প্রয়োজন ৩১ রান, উইকেটে শেষ জুটি। নিস্তরঙ্গ এই ম্যাচেই আচমকা প্রাণ ফেরালেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। রুবেল হোসেনের ওভারে একের পর এক ছক্কায় তিনি বইয়ে দিলেন রোমাঞ্চের ঢেউ। তবে পাঁচ বলে চার ছক্কার পর শেষ বলটি আর ছক্কায় ওড়াতে পারলেন না কামরুল। মুঠোয় পাওয়া ম্যাচ প্রায় ফসকে যেতে বসলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারল প্রাইম ব্যাংক।
১২ বলে ৩৮ রানের অসাধারণ ক্যামিও খেলেও কামরুল মাঠ ছাড়লেন হতাশায়। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে লিগে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের জয় ৩ রানে।
বিকেএসপিতে বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ মিঠুনের ফিফটিতে প্রাইম ব্যাংক ২০ ওভারে করে ১৫১ রান। কামরুলের শেষের ঝড়ের পর প্রাইম দোলেশ্বর যেতে পারে ১৪৮ পর্যন্ত।
শেষ ওভারে রুবেলের প্রথম বলটি হাফভলি পেয়ে লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন কামরুল। পরের বলে ব্যাটের কানায় লেগে পান দুই রান। পরের দুই বলে দুটি লেংথ বল, একটি ছক্কা সোজা ব্যাটে লং অফ দিয়ে, আরেকটি স্লগ করে মিড উইকেট দিয়ে। পঞ্চম বলটি রুবের করেন ফুল টস, আবার ছক্কা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে।
শেষ বলে চার নিলে ম্যাচ টাই, ছক্কায় জয়। অফ স্টাম্পে থাকা লেংথ বলে এবার সজোরে খেলেও টাইমিং করতে পারেননি কামরুল। মেলে কেবল এক রান।
ব্যাটিং ঝড়ের আগে বল হাতেও কামরুল ছিলেন দোলেশ্বরের সেরা। ৪ ওভারে ২২ রানে নেন ২ উইকেট। কিন্তু তার এমন পারফরম্যান্সও যথেষ্ট হলো না দলকে জেতাতে।
কামরুলের ইনিংসের আগে প্রাইম দোলেশ্বরের রান তাড়া ছিল একদমই দিশাহীন। এবারের লিগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নজর কাড়া ইমরান উজজামানকে এ দিন ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। রুবেলকে ছক্কা মেরে পরের বলে বিদায় নেন সাইফ হাসান।
প্রাইম ব্যাংকের ইনিংসের ভিত্তি ছিল মোহাম্মদ মিঠুনের ফিফটি।
দুই অভিজ্ঞ মার্শাল আইয়ুব (২৪ বলে ২২) ও ফজলে মাহমুদ (২৫ বলে ২১) মন্থর করে দেন রানের গতি। ঝড় তুলতে পারেননি শামীম হোসেন, ফরহাদ রেজারাও। দল তাই একশ পেরোয় খুঁড়িয়ে। এরপর কামরুলের ব্যাটে হঠাৎ আশা, শেষে আবার হতাশা।টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংকের শুরুটাও ভালো ছিল না। প্রথম ওভারে এনামুল হক জুনিয়রের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড রনি তালুকদার। শামীমের বলে শাফল করে আবার সুইপ খেলতে গিয়ে তামিম ইকবাল এলবিডব্লিউ ৮ রানে।
অধিনায়ক এনামুল হক শুরুটা দারুণ করেও বড় করতে পারেননি ইনিংস। ২ ছক্কায় ১৮ বলে ২৯ করে বোল্ড হন তাইবুর রহমানের সোজা বল ভুল লাইনে খেলে। সেখান থেকে দলকে টেনে নেন মিঠুন।
শুরুটা ঝড়ো ছিল মিঠুনেরও। উইকেটে যাওয়ার পরপরই এক ছক্কা দুই চার মারেন শামীমের চার বলের মধ্যে। তবে দলের অবস্থা বুঝে পরে মন দেন ইনিংস এগিয়ে নেওয়ায়। লিগে দ্বিতীয় ফিফটি করে তিনি আউট হন শেষ ওভারে (৫০ বলে ৫৫)।
শেষ দিকে অলক কাপালীর ১৪ বলে ২৬ রানের ইনিংসে দেড়শ ছাড়ায় দলের স্কোর।
মুস্তাফিজ, শরিফুল ইসলামদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এই পুঁজিতেই ধরা দিচ্ছিল প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়। পরে কামরুলের ব্যাটিং চমকে হারের শঙ্কা, শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে হলেও জয়ের স্বস্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক: ২০ ওভারে ১৫১/৭ (তামিম ৮, রনি ০, এনামুল ২৯, মিঠুন ৫৫, আরাফাত সানি জুনি. ৫, নাহিদুল ২০, অলক ২৬, নাঈম ১*; এনামুল জুনি. ৪-০-১৭-১, শামীম ৩-০-৩৩-১, তাইবুর ২-০-২১-১, রেজাউর ৪-০-৩৮-১, কামরুল রাব্বি ৪-১-২২-২, ফরহাদ ৩-০-১৯-০)।
প্রাইম দোলেশ্বর: ২০ ওভারে ১৪৮/৯ (ইমরান ০, সাইফ ১৩, মার্শাল ২২, ফজলে মাহমুদ ২৪, শরিফউল্লাহ ১৯, শামীম ১, ফরহাদ ১৩, রেজাউর ৮, তাইবুর ৩, কামরুল রাব্বি ৩৮*, এনামুল জুনি. ০*; মুস্তাফিজ ৪-০-২৫-৩, রুবেল ৪-০-৪৬-২, শরিফুল ৪-০-১৫-২, নাঈম ৩-০-১৯-১, অলক ৪-০-৩০-১, নাহিদুর ১-০-৭-০)।
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ মিঠুন।