ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সংসদ সদস্য সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার রূপকল্প ২০৪১ পর্যন্ত রয়েছে। দরকার কী নির্বাচনের নামে এই ধরনের প্রহসন, নির্বাচনের নামে এ ধরনের হানাহানি, খুনোখুনি সংঘাত। দরকার কী ?”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বিশেষ আলোচনায় হারুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এই প্রশ্ন রাখেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
হারুন বলেন, “সংবিধানে বলা আছে স্থানীয় প্রতিনিধিরা হবেন নির্বাচিত। চলমান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত তিন-চারশ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের কে নির্বাচিত করল? তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।”
স্পিকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির এই সংসদ বলেন, “আমি আপনার কাছেই জানতে চাই, মাননীয় স্পিকার, আজকে যারা বিনা ভোটে, নির্বাচন কমিশন যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করছে, তাদেরকে আমি কী বলব? অনির্বাচিত বলব না নির্বাচিত বলব। তারাতো নিশ্চয় বিনাভোটে নির্বাচিত।
“এই কথাগুলো বলতে গেলে সরকারি দলের সদস্যরা তাদের বাধা দেন, উপহাস করেন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।”
হারুন বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে সবসময় গালিগালাজ করা হয়। তাদের ব্যর্থতা নিয়ে কথা হয়। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ সব ধরনের সহযোগিত করবে। নির্বাহী বিভাগ সহযোগিতা না করলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে?”
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, “৫০ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হয়নি। একপক্ষের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অন্য পক্ষ জয়ী হয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। সত্যিকার অর্থে জাতি আজ বিরাট সংকটে।
“স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি অবদান বঙ্গবন্ধুর। এটি অস্বীকার করার পথ নেই। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কোনো দলিলে এটি দেখিনি। বেগম মুজিবও লিখেছেন, ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়। সেদিন রাত ১২ টায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটি নিয়ে বিতর্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই। বিতর্ক করে মুজিবকে বড় বা ছোট করা যাবে না। ইতিহাসের জায়গায় ইতিহাস থাকবে।”
হারুন বলেন, “দুদিন ধরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় সংকটগুলো নিয়ে সংসদ সদস্যরা কথা বলছেন না। ৫০ বছর চলে গেছে এখনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। সার্বজনীন স্বাস্ত্য ব্যবস্থা উন্নত করতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। নিয়োগ, ভর্তি, কেনাকাটায় দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছে। তাহলে আমরা ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে কী অর্জন করলাম?”
হারুন অভিযোগ করেন, দেশে এখন লুটপাটের মহোৎসব চলছে। ডিজিটাল দুর্নীতি হচ্ছে। ইকমার্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জাতীয় সংসদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বাস্তবে সংসদে সরকারি দল বিরোধীদল একাকার হয়ে গেছে। সংসদ জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না।