জাতীয়

রেস্তোরাঁর মাচাতেই লাশ হলেন ‘ঘুমন্ত ৬ কর্মী’

আগুন নেভার পর লাশগুলো পাওয়া গেছে রেস্তোরাঁর মাচায়, সেখানে কর্মীরা ঘুমাতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রেস্তোরাঁর ওপর যে মাচায় ঘুমাতেন কর্মীরা সেটাই দেখাচ্ছিলেন উদ্বিগ্ন স্বজনরা। ঠিক তখনই একজনের পোড়া হাত বের হয়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক তরুণ।

ভাই ওসমান ওই রেস্তোরাঁয় রাতের পালার কর্মী, ডুকরে কেঁদে জানালেন মো. ইকবাল নামে ওই তরুণ। এরপরই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই দিয়ে মাচায় উঠে ছয়জনের পোড়া দেহের সন্ধান পান।

এর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকেও কথা হয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদের সঙ্গে। তখনও ঘটনাস্থলে হতাহতের কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।

তিনি জানিয়েছিলেন, ভেতরে প্রচন্ড ধোঁয়া। সেখানে কাজ করতে গিয়ে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

একটু পরই রেস্তোরাঁ কর্মীদের কয়েকজন আত্মীয় এসে জানান, তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

সোমবার বেলা ১২টার দিকে চকবাজারের কামালবাগে দেবী দাস ঘাট এলাকার চারতলা একটি ভবনে আগুন লাগার পর ফায়ার সর্ভিসের ১০টি ইউনিট সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুন নেভার পর লাশগুলো পাওয়া গেছে ভবনের নিচতলায় ‘বরিশাল রেস্টুরেন্টের’ ছাদের নিচে কাঠ দিয়ে বানানো মাচায়। সেখানে কর্মীরা ঘুমাতেন বলে জানান চকবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম।

রাতের পালায় কাজ করা আটজন কর্মী দিনের বেলায় সেখানে ঘুমাতেন। সেখানেই মিলেছে ছয়জনের লাশ।

ফায়ার সার্ভিসের অয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মাচা থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে।

তবে লাশগুলো শনাক্ত করা যায়নি। রেস্তোরাঁর নিখোঁজ কর্মী বিল্লালের ভাই আইয়ুব আলী বলেন, “আগুন লাগার পর থেকেই বিল্লালকে ফোন করে পাওয়া যাচ্ছিল না।”

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও যখন বলা হচ্ছিল যে, হতাহত নেই তখন তারা আশায় বুক বাঁধছিলেন।

তিনি বলেন, “এমনও হতে পারে যে, তার ফোনটা পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সব আত্মীয়-স্বজনকে আসতে বলেছি, যাতে খোঁজাখুঁজি করে বিল্লালকে পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হল না।”

অগ্নিকাণ্ডে বিল্লাল এবং ওসমান ছাড়াও শরীফ এবং স্বপন নামে রেস্তোরাঁর আরও দুই কর্মীর সন্ধানে ঘটনাস্থলে এসেছেন তাদের স্বজনরা।

তবে উদ্ধার করা লাশগুলো স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে আসা স্বজনদের ঘটনাস্থল থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

দেবী দাস ঘাটের সরু গলির মধ্যেই সারি সারি প্লাস্টিকের কারখানা ও প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম। সোমবার দুপুরে যে ভবনটিতে আগুন লাগে তার নিচতলাতেই ওই রেস্তোরাঁ।

পাশেই প্লাস্টিক কারখানার কাঁচামালের দোকান আর উপরের তলায় প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির কারখানা। স্থানীয়রা জানান, কারখানাগুলোতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ হয়। তাই রেস্তোরাঁটিও রাত-দিন খোলা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *