রাজনীতি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছি। সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেছি।

বিশেষ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

বুধবার (১৬ জুন) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে ভার্চ্যুয়াল ইভেন্টটির আয়োজন করে। বাংলাদেশ আয়োজিত ইভেন্টটির সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’।

ইভেন্টটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভলকান বজকির তার সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ইভেন্টটির সমৃদ্ধ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদি সিনির লইয়োগ্লু, জাতিসংঘের জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা মিজ অ্যালিস ওয়াইরিমু নেডিরিটু, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যানড্রিউজ, জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক মিজ ওয়াই ওয়াই নু। প্যানেল আলোচনা পর্বটির সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. সায়মন অ্যাডাম।

ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও মানবীয় উদারতার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, এই নীতি-আদর্শ ও উদারতাই আমাদের সহিংসতার শিকার, বাস্তচ্যুত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দানে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের সম্পদ ও স্থানের তীব্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।

ভাষাণচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নব্যসৃষ্ট আবাসন সুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গদের জন্য সৃষ্ট নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং এখানে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বদা সচল রাখতে অব্যাহত যেসব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে তা স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি এ বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি আশা করেন নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদেরও দায়বদ্ধতা পরিপালন করবে এবং মিয়ানমার সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান।

প্যানেলিস্টরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মানবীয় উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা সবাই এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেন যার শিকড় মিয়ানমারেই নিহিত। প্যানেলিস্টরা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরুপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।

জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্র, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী ভার্চ্যুয়াল এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *