র্যাবের ওপরে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সব দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে বলে মনে করে বিএনপি।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করার কারণেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর সব দায়িত্ব সরকারের। তিনি বলেন, সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন সম্প্রতি ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক নির্বাহী আদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ র্যাবের ছয় জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর আর্থিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন রাজস্ব মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ সম্পর্কিত মার্কিন রাজস্ব বিভাগের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ব়্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগসহ আইনের শাসন, বিভিন্ন মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ হুমকিতে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনে ব়্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় রয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের এসব ঘটনায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে বলেও কিছু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মূলত এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮ এর অধীনে বিদেশি সংস্থা হিসেবে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন রাজস্ব মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশেষায়িত একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক কৌশলগত অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত বিব্রতকর ও উদ্ধেগজনক। তবে তা ছিল নিঃসন্দেহে অবশ্যম্ভাবী। কারণ, গত এক দশক ধরে বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রায় সব গণতন্ত্র চর্চায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন ও ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বের নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে ব্যাপকভাবে আলোচিত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি পরাশক্তি রাষ্ট্র কর্তৃক বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় ভবিষ্যতে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেনা মোতায়েন প্রভাবিত হতে পারে। এর ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র সম্মেলন’-এ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্য দিয়ে তা আরও সুস্পষ্ট হয়। বাংলাদেশে চলমান নির্বাচনহীন সংস্কৃতি, দিনের ভোট রাতে লুটের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার জন্য তারা র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে। র্যাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ কার্যত রাজনৈতিক সরকারের দায়। তাই র্যাবের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা তা এক অর্থে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞার শামিল। কারণ, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রহীন সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য র্যাবকে বিভিন্ন আইন বিরোধী সংস্কৃতির অংশ হতে বাধ্য করেছে। অতএব, রাজনৈতিক সরকারের দায় বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যাবে না। তবে যারা ইতোমধ্যেই সরকারের এ ধরনের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের অংশীদারি পরিণত করে নানা ধরনের বিচার বহির্ভূত সংস্কৃতি চালু করতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং বেসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্পূর্ণ দায় আওয়ামী লীগের।
তিনি আরও বলেন, দেশে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক ব্যবস্থা করে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করে মানবাধিকার ও বিচার পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পালনকালে এটাই হতে পারে সমগ্র দেশবাসীর জন্য সর্বোত্তম প্রাপ্তি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ দলীয় নেতারা।