খেলাধুলা

লিটন-রনির ঝড়ের পর বিধ্বংসী তাসকিন, সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশ

দুইশ ছাড়ানো স্কোরের পর বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারাল সাকিব আল হাসানের দল।

খেলা শুরুর আগে চট্টলার আকাশ খানিকটা মেঘলা। চারপাশ গুমোট। একটু পর ঠিকই উঠল ঝড়। তবে প্রকৃতিতে নয়, জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজে! রনি তালুকদার ও লিটন দাস যেন তাণ্ডব বইয়ে দিলেন আইরিশ বোলারদের ওপর দিয়ে। বৃষ্টিতে নতুন মোড় নেওয়া ম্যাচে পড়ে বল হাতে জ্বলে উঠলেন তাসকিন আহমেদ। প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২২ রানে হারাল বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, উইকেটের সম্ভাব্য আচরণের কোনো ধারণা তার নেই। যত বেশি সম্ভব রান তুলতে চান তারা। সেই পথে দলকে এগিয়ে নেন দুই ওপেনার লিটন ও রনি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রেকর্ড রান তুলে শেষ পর্যন্ত ৯১ রানের জুটি গড়েন তারা স্রেফ ৭.১ ওভারে।

৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন রনি। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৪৭।

ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ভালো শুরু পাওয়া আইরিশদের আশা গুঁড়িয়ে ১ ওভারেই ৩ উইকেট নেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি ১৬ রানে।

টস জয়ী আয়ারল্যান্ড বোলিং শুরু করে হেরি টেক্টরকে দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ টি-টোয়েন্টিতে তিনি একটি বলও করেননি। তবে আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এ দিন অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তার অফ স্পিনে। প্রথম ওভারে তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় শুরু করেন লিটন। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন রনি। ব্যস, দুজনের রান রথ ছুটতে থাকে।

চার-ছক্কা আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। পেস-স্পিন, কিছুই পায়নি পাত্তা।

প্রথম ৫ ওভারে ভিন্ন ৫ বোলার ব্যবহার করেন এই সিরিজের আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। কিন্তু রান স্রোতে বাঁধ দিতে পারেননি কেউ। ৫ ওভারে রান উঠে যায় ৬১।

পরের ওভারে সেই রান পেরিয়ে যায় ৮০। মার্ক অ্যাডারের করা ওভারটিতে প্রথম বলে কঠিন একটা সুযাগ দিয়েছিলেন লিটন। পরের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে রনির ছক্কা, এরপর টানা তিন বাউন্ডারি।

৬ ওভারেই চলে আসে ১২ বাউন্ডারি। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৮১। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মিরপুরে ৭৬।

অপ্রতিরোধ্য জুটিকে শেষ পর্যন্ত থামাতে পারেন ক্রিস ইয়াং। তার স্লোয়ারে আলতো শটে মিড অফে ধরা পড়েন লিটন। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ করে ফেরেন তিনি।

লিটনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ করে। তবে আইরিশদের স্বস্তি ফেরেনি। রনির ঝড় চলতে থাকে। চারে নেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গী হন শামীম হোসেনও।

বেন হোয়াইটওকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৪ বলে। তার জন্য আবেগময় এক মাইলফলক। সেই ২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি কদিন আগে। ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশেষে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটির স্বাদ পেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে, অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর।

শামীম ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মারেন হোয়াইটকে। ওই ওভারে ছক্কা আসে রনির ব্যাট থেকেও।

রনির ইনিংস শেষ হয় রানের তাড়নাতেই। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বলে স্লগ খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যাডায়ারের কাটারে শামীমের ইনিংস থামে ২০ বল ৩০ রানে। এই দফায় দলে ফেরার পর তার প্রথম ইনিংস ছিল এটি। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে খেললেও ব্যাটিং পাননি।

সাকিব শুরু করেন প্রথম বলের বাউন্ডারিতে। তাওহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান এক ছক্কায় ৮ বলে ১৩ করে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলকে সীমানায় পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজও। এর পরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সাকিব তখন অপরাজিত ১৩ বলে ২০ করে।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২১৫, দেশের মাঠে সর্বোচ্চ ২১১। চার বল আগে ইনিংস থেমে যাওয়ায় তা আর ছাড়ানো হলো না।

২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয় যে সমীকরণে, আয়ারল্যান্ডের সামনে জয়ের হাতছানি ছিল তাতে ভালোভাবেই। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার শুরুটাও করেন আশা জাগানিয়া। পাওয়ার প্লের ২ ওভারে দুজন তোলেন ৩২ রান।

নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান, মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৪।

পরের ওভারেই রাশ টেনে ধরেন হাসান মাহমুদ। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে টানা তিন বলে রান দেননি তিনি রস অ্যাডায়ারকে। পরের বলে আইরিশ ওপেনার খেলার চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে, হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কার ভেঙে দেয় মিডল স্টাম্প।

পরের ওভারেই তাসকিনের তিন ছোবল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ফুল লেংথ বলে বোল্ড লর্কান টাকার। স্লগ করে বোল্ড স্টার্লিং (৮ বলে ১৭)। পয়েন্ট সীমানায় ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল।

পরে হাসানের এক ওভারে টেক্টরের তিন বাউন্ডারিতে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞতার সবটুকু মেলে ধরে সাকিব দেন স্রেফ ৫ রান।

পরের দুই ওভারে আর পেরে ওঠেনি আইরিশরা। শেষ ওভারে অসাধারণ ক্যাচে টেক্টরকে ফেরান মিরাজ, ৪ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে স্বস্তিতে।

ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে পারেননি রনি তালুকদার। তার হয়ে তা গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাকিব।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বুধবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ (লিটন ৪৭, রনি ৬৭, শান্ত ১৪, শামীম ৩০, হৃদয় ১৩, সাকিব ২০*, মিরাজ ৪*; টেক্টর ২-০-১৬-১, অ্যাডায়ার ৩.২-০-৪৮-১, হিউম ৪-০-৩৫-১, ইয়াং ৪-০-৪৫-২, ডেল্যানি ৩-০-২১-০, হোয়াইট ৩-০-৩৭-০)

আয়ারল্যান্ড: (লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪) ৮ ওভারে ৮১/৫ (স্টার্লিং ১৭, রস অ্যাডায়ার ১৩, টাকার ১, টেক্টর ১৯, ডকরেল ০, ডেল্যানি ২১*, ক্যাম্পার ১*; নাসুম ১-০-১৮-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৬-০, হাসান ২-০-২০-১, তাসকিন ২-০-১৬-৪, সাকিব ১-০-৫-০)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *