জাতীয়

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

দেশে শীত কমার আপাতত কোনো সুখবর নেই। মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এদিকে তীব্র শীতের মধ্যেই এবার চার বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে-এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বুধবার ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েক জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার কোথাও কোথাও কমতে পারে তাপমাত্রা। তীব্র শীতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

কুয়াশার কারণেই অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে না। উত্তর-পশ্চিমের বাতাসের কারণে দেশের কোথাও কোথাও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে দেশের যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকবে, ওই অঞ্চলে স্কুল বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু সব জায়গায় সেটি মানা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা সকালে স্কুলে চলে এসেছে। পরে জানতে পেরেছে বন্ধের খবর।

বিশেষ করে দিনাজপুর, বগুড়া, পঞ্চগড়, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে এমনটি ঘটেছে। যশোরে তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি থাকলেও সোমবার খোলা ছিল সব স্কুল। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা। আবার কোথাও কোথাও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ প্রায় ১৫টি জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এদিকে শীতের কারণে নিম্নবিত্তদের আয়ে প্রভাব পড়ছে। বাড়ছে শীতকালীন রোগবালাই। তবে ঢাকায় গরম কাপড় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এছাড়াও উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিত অংশ পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। এসবের প্রভাবে বাংলাদেশে তাপমাত্রা কমছে।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

কুয়াশার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মঙ্গলবার মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা; রংপুর বিভাগের ৮ জেলা এবং রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলাসহ ২২ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজও তা অব্যাহত থাকতে পারে।

সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুর ও বদলগাছীতে ৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রয়েছে এমন স্থানগুলো হলো রাজারহাট ৮.৪, সৈয়দুপুর ৮.৮, ডিমলা ৮.৮, টাঙ্গাইল ৮.৯, বগুড়া ৯.১, ঈশ্বরদী ৯.২, চুয়াডাঙ্গা ৯.৫, যশোর ও কুমারখালী ৯.৮, মাদারীপুর ৯.৯ এবং রাজশাহী ও নিকলি ১০। আর সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ৫ ডিগ্রির নিচে থাকলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কিছু এলাকা যা ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র এবং ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।

ছয় ঋতুর এ দেশে পৌষ ও মাঘকে শীতকাল বলা হয়। এ দুই মাসে বেশি শীত পড়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছরে তাতে ছন্দপতন হয়েছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের পর ২৩ অগ্রহায়ণ থেকে ঢাকায় কিছুটা শীত অনুভূত হয়। এরপর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও পৌষের দিকে শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। এখনো অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারির শেষের দিকে শীত আরও বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *