রাজনীতি

শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ করেছেন জয়, এখনও রয়েছেন ভারতে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে গিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

হাসিনাপুত্র জয় বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা ।

এছাড়া ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর একাধিক সূত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, গত ৬ জুন (শুক্রবার) সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতের মাটিতে পা রাখেন। তার পরেরদিনই ছিল কোরবানির ঈদ। মায়ের সঙ্গেই ঈদ কাটিয়েছেন তিনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রথম শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছেলের দেখা হলো। মায়ের সঙ্গে ঈদ করলেও দিল্লিতে অবস্থানরত বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে জয়ের দেখা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি।

মূলত মায়ের সঙ্গে ঈদ পালন করার উদ্দেশ্যেই ভারতে গিয়েছেন জয়। তার এই সফর যতটা না রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি পারিবারিক – এমনটিই দাবি সূত্রগুলোর।

ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মাস কয়েক পরে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল জয়ের। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সবুজ সংকেত দিয়েছিল। তবে সেই সফর এগিয়ে এনে শুক্রবারই দিল্লিতে নামেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয় শেখ হাসিনা যেখানে অবস্থান করছেন সেই গোপন ঠিকানায়। ভিভিআইপিদের যেভাবে পাইলটকারসহ সামরিক পোশাক পরিহিত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে নিয়ে যাওয়া হয় জয়কে সেভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অত্যন্ত গোপনে কাজটি করা হয়, যেন কাকপক্ষীও টের না পায়।

পারিবারিক সফর

পালিয়ে ভারতে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে একাধিক জন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই ভারত সফর মূলত পারিবারিক।

এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে এত মাস পরে ছেলের দেখা হয়েছে। তারা ঈদ কাটিয়েছেন একসঙ্গে, গত কয়েকদিন একসঙ্গেই আছেন। নিশ্চই রাজনৈতিক আলোচনাও হয়েছে কিছু। তবে জয়ের এই সফর বেশিটাই পারিবারিক সফর। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কদিনের মধ্যে নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়নি। কিন্তু যখন কথা হবে, নিশ্চয়ই আমরা জানতে পারব যে তাদের দুজনের মধ্যে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন তারা পারিবারিক সময় কাটাচ্ছেন। ’

অন্য নেতাদের সঙ্গে কী দেখা হয়েছে জয়ের?

মা-ছেলের দেখা হয়েছে নিশ্চিত করা গেলেও পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে জয়ের দেখা হয়নি  বলেই জানা যাচ্ছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে ভারতে পালিয়ে আসার পর থেকে দিল্লিতেই শেখ হাসিনার থাকার ব্যবস্থা করেছিল ভারত সরকার। প্রথম দু-চারদিন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।

পরে ভারত সরকার হাসিনাকে হিণ্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায় নিয়ে যায়। হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে ভারত সরকার কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষকে জানিয়েছিলেন. ‘শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা– এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল!

ভারতে অবস্থানরত এক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার নিয়মিত কথা হলেও সশরীরে কারও সঙ্গে দেখা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী – এরকমটা তার জানা নেই।

কতদিন ভারতে থাকবেন জয়?

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ভারতেই থেকে গিয়ে দলের কাজকর্মে সশরীরে যোগ দেওয়ার অভিপ্রায় নেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের। তিনি শুধু তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। দীর্ঘ সময় ভারতে থাকার পরিকল্পনা নেই তার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি হয়তো ফিরে যাবেন।

ভারত সফরে এসে জয় কলকাতাতেও আসতে পারেন বলে জানা গিয়েছিল। কারণ, কলকাতা এবং তার আশপাশের অঞ্চলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও এমপিরা থাকছেন এবং এই অঞ্চলেই রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যবসায়ী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবীরা। তাই কলকাতায় এসে তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন জয় – এরকমটা জানা যাচ্ছিল।

এখন ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো বলছে, অন্তত এবার জয়ের কলকাতায় আসার কোনো পরিকল্পনা নেই।

উল্লেখ্য, সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, কিন্তু তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ওই পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। এরপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান জয়। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পান। গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর থেকেই জয়ের ভারত ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা চলছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *