একসময় ক্রিকেটের ২২ গজের পিচে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সাবেক এই অলরাউন্ড ইমরান খান। ক্রিকেট মাঠ থেকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রবেশ, এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সেখানেও নিজেকে অলরাউন্ডার প্রমাণ করেছেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।
তবে ক্রিকেটের মতোই রাজনৈতিক জীবনেও উত্থানপতন আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো দেশে, সেখানে কোনো প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি, সেখানে এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি তেমনই টালমাতাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি ইমরান খান। দেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনার অভিযোগে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়েছিলেন ইমরান খান। অবশ্য আপাতত নিজের বাঁচিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা।
জাতীয় পরিষদের স্পিকার তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ায় ইমরান খানের অনুরোধে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভি। এরপরই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ইমরান খান।
অবশ্য রোববারের অনাস্থা ভোটের আগেই বিষয়টি সামাল দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। শনিবার লাইভ সম্প্রচারেই এক নাগরিকের প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় পরিষদের অনাস্থা ভোট নিয়ে তার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, আমার একাধিক পরিকল্পনা আছে। কাল আমিই জিতব।
তবে অনাস্থা ভোট ঠেকালেও আগাম নির্বাচন ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আসলে কী বয়ে আনবে সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
ইমরান খানের পর পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি নওয়াজ শরিফের ভাই বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ।
শাহবাজ শরিফও ধোয়া তুলসি পাতা নন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। যদিও বিরোধীরা ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে শাহবাজ শরিফকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একতরফা ঘোষণা দিয়েছে। ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আইনসভায় এরই মধ্যে ভাষণও দিয়েছেন শাহবাজ খান।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ইমরান খানতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ‘অপ্রতিরোধ্য সাফল্য’ দেখিয়েছে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক ডামাডোলে ইমরান খানের অবস্থা যে পর্যায়েই দাঁড়াক না কেন দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সম্প্রতি নির্বাচন সেই বিষয়টিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের টালমাটাল রাজনীতিতে ‘অলরাউন্ডার’ ইমরান খান নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে পারবেন কী না তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত।