আটলান্টিক মহাসাগরে ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে পাঁচ পর্যটকসহ হারিয়ে যায় ডুবোযান ‘টাইটান’। ছোট সাবমেরিনটির সন্ধানে রাত-দিন চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডার উদ্ধারকারী দল।
এক্ষেত্রে তিন দেশের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ডুবোযানটিতে ৪ দিনের অক্সিজেন মজুত ছিল। সে হিসাবে আজ ভোর ৫টায় এই অক্সিজেন শেষ হওয়ার কথা। ফলে পর্যটকদের জীবিত উদ্ধার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
খবরে বলা হয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশেনগেটের ডুবোজাহাজটি নিউফাউন্ডল্যান্ডের রাজধানী সেন্ট জনস থেকে প্রায় এক হাজার ৪৫০ কিলোমিটার পূর্ব এবং ৬৪৩ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের কমান্ডাররা। সবাইকে জীবিত উদ্ধারে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ফ্রান্সের বিশেষজ্ঞ দল।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানিয়েছে, রোববার টাইটান ডুবে যাওয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গেল ৪ দিনে সেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এর অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। তারা আরও জানান, কানাডার একটি পি-৩ আকাশযান পানির নিচে ‘শব্দ’ শনাক্ত করেছে। সেটি ছিল ‘আঘাতের মতো শব্দ’।
কিন্তু এ শব্দ কতক্ষণ স্থায়ী ছিল তা জানা যায়নি। এ শব্দ টাইটানের সন্ধান পেতে তাদের সহায়তা করতে পারে বলে আশা কোস্টগার্ড কমান্ডারদের।
পর্যটকবাহী সাবমেরিনে যারা রয়েছেন তাদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন-৫৮ বছর বয়সি ব্রিটিশ ধনকুবের হামিস হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ওশেনগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সি স্টকটন রাস। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ৭৭ বছর বয়সি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডাইভার পল হেনরি নারগোলেট।
আবহাওয়ার কারণে আটলান্টিকে অভিযানের কাজটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং জটিল বলেছেন সাবেক নাসা মহাকাশচারী এবং মার্কিন নৌবাহিনীর অধিনায়ক মার্কিন সিনেটর মার্ক কেলি।
১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথমযাত্রায় বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের। দুই টুকরো হয়ে যাওয়া
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের এ এলাকাটি কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জোন্স থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
পর্যটন সংস্থা ওশেনগেট টাইটানিকের ওই ধ্বংসাবশেষ দেখাতে নিয়ে যায় পর্যটকদের। সেজন্য তারা ব্যবহার করে কার্বন-ফাইবারের তৈরি প্রায় ট্রাকের সমান আকারের একটি সাবমারসিবল। যার নাম টাইটান। এটি সাগরতলের ৪০০০ মিটার গভীরে যেতে পারে।