ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ‘অশুভ শক্তির’ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেছেন, “সকল ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে ছাত্রলীগ যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে, আগামী দিনেও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে একটি অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে।”
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নাম নিয়ে শুরু করা সংগঠন ধাপে ধাপে পাল্টে স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’নাম ধারণ করে।
বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠনটি ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
প্রথম দিন মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৭টায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এরপর দুপুরে অপরাজেয় বাংলার সামনে উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়। এর শুরুতে মারামারি বাঁধায় দেড় ঘণ্টা পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন ঘোষণা করেন নানক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নানক বলেন, “এই ছাত্রলীগ কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারকে বাংলাদেশের জনগণের মাথার ওপর জগদ্দল পাথর হয়ে বসতে দেয়নি। এই ছাত্রলীগ মানবিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
“এই করোনাকালীন সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ কৃষকের ফসল ঘরে তুলে দিয়েছে। মা যখন তার সন্তানের কাছে যায় না, সন্তান যখন তার পিতার দেহ স্পর্শ করে না, সেই মুহূর্তে এই ছাত্রলীগ দাফন-কাফন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করে গেছে।”
সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা বেরিয়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে শাহবাগ-মৎস্য ভবন-কাকরাইল-পল্টন হয়ে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রঙিন পোশাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল। ছবি: কাজী সালাহউদ্দিন রাজুছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রঙিন পোশাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল। ছবি: কাজী সালাহউদ্দিন রাজু
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ৫ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচার হবে প্রতিটি জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে।
৬ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে পথশিশুদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বিকাল ৩টায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়া ৭ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগে ভাঙনের পর সৃষ্ট জাসদ ছাত্রলীগও এদিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে।
সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ শেষে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও লাল পতাকা শোভিত একটি শোভাযাত্রা বের হয়।
সমাবেশে জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বৈষম্য-নৈরাজ্য-বিশৃংখলা-দুর্নীতি দূর করতে না পারাটা জাতীয় নেতা-নেত্রীদের ব্যর্থতা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
“কোনো অজুহাত না দেখিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য-বিশৃংখলা-নৈরাজ্য-দুর্নীতির অবসান করে একমূখী মানসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমূখী শিক্ষা চালু করতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্তবুদ্ধি যুক্তি-জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।”
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ-গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস ও চেতনা ধারন করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিদুল হক ননীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহাম্মেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সাবেক নেতাদের মধ্যে অভিনেতা নাদের চৌধুরী, মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, শওকত রায়হান, মোহাম্মদ মোহসীন, সাইফুজ্জামান বাদশা, আহসান হাবীব শামীম উপস্থিত ছিলেন।