রাজনীতি

সরকার ‘মোনাফেক’, দাবি না মানলে রাজপথ ছাড়বেন না: শিক্ষকদের হাসনাত আবদুল্লাহ

“বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না,” বলেন তিনি

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহিত প্রকাশ করে হাসনাত বলেন, “প্রিয় শিক্ষক সমাজ, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনাদের দাবি করা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এই মোনাফেক অন্তর্বর্তী সরকার মেনে নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।

“এটা রাষ্ট্রের কাছে কোনো ভিক্ষা নয়, এটা রাষ্ট্রের কাছে আপনাদের অধিকার।”

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের শহীদ মিনার না ছাড়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অব্স্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষকদের একটা অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পর পর বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়। প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও আনা হয়।

বিকালে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই হীন কাজের জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।

“আর যাদের আপনারা (পুলিশ) গ্রেপ্তার করেছেন, তাদের সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।”

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ায় সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেতেন। এখন পান ৫০ শতাংশ হারে।

তারা এখন ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দাবি করছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার দাবি নিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের চাওয়াতো কত কম, রিপোর্টটা দেখাইতে ১৫০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়। বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না। বাংলাদেশি পোশাক

“স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমরা বানাইসি দেশের স্বাস্থ্য সংস্কার করার জন্য। কিন্তু উনি যখন অসুস্থ হন উনি চিকিৎসা নিতে যান সিঙ্গাপুর। এর থেকে লজ্জার কি আছে?

“উচিত ছিল, আমার জনগণ যতক্ষণ না পর্যন্ত সুচিকিৎসা পাচ্ছে, আমি যেহেতু এই চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছি, আমি নিজেও এই চিকিৎসা কার্যক্রমের অংশ হবো; কিন্তু আমরা দেখলাম তারা নির্লজ্জের মত সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যায়।”

প্রশাসনে পদয়ান-পদোন্নতি নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন কর হয়েছে বলে অভিযোগ করে হাসনাত বলেন, “আমরা কখনই শিক্ষকদের গলা চেপে ধরতে দেখি নাই রাষ্ট্রের।

“তাদের এই মিটিংয়ের প্রতি সম্মান জানাইয়া আমরা রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করতে চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করতে হবে।”স্বাস্থ্য বীমা

শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে সোমবার থেকে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

একই সঙ্গে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *