রাজনীতি

‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা’

গরিব ও ভূমিহীন মানুষের ঘর নিয়ে যারা দুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছে তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেছে বিএনপি।একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব ও ভূমিহীনদের ঘর পুনঃনির্মাণ করে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে দলটি।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

তিনি বলেন, জনপ্রিয় একটি প্রবাদ আছে- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা’। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই প্রবাদটি বর্তমানে বাংলাদেশের বেলায় অতি প্রযোজ্য। মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের ছোট প্রজেক্ট- সব জায়গায় দুর্নীতি আর লুটপাটের মহৌৎসব চলছে, এ যেন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। এমনকি ভূমিহীন গরিব মানুষের জন্য নির্মিত ঘর, যা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ হিসেবে উল্লে­খ করা হচ্ছে, সেই ঘর নিয়েও যে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয়করণ হয়েছে। সেই ঘরগুলো হস্তান্তরের আগেই বা হস্তান্তরের পর দু’তিন মাস যেতে না যেতেই যেভাবে ধসে পড়তে দেখা গেল তাতেই প্রমাণিত হয় দেশে উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে।

প্রিন্স বলেন, এছাড়াও গরিব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বরাদ্দ, যেমন- কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প, বিধবা-দুস্থ-বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়েও সরকারি দলের লোকেরা লুটপাট ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। যারা গরিব মানুষের হক নিয়ে দুর্নীতি করে তাদের দ্বারা আর যাই হোক জনকল্যাণ হতে পারে না। ভূমিহীন গরিব-অসহায় মানুষকে ঘর প্রদান নিয়ে যদি দুর্নীতি, লুটপাটের এই চিত্র হয়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে- তা সহজেই অনুমেয়। সরকার আপাদমস্তক এখন দুর্নীতিগ্রস্ত।

তিনি দাবি করেন, সরকার ঘোষিত ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রীর উপহার উল্লে­খ করে গৃহহীন, ভূমিহীন, গরিব ও অসহায় মানুষকে দেওয়ার জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তা শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ ছিল।গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ তালিকায় নাম ওঠানো হয়েছে। জায়গা-জমি-বাড়ি-ঘরের মালিক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নামও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের তালিকায় তোলা হয়েছে। অনেক গরিব মানুষ মাথা গোজার একটু ঠাঁই পাওয়ার আশায় পালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, আসবাবপত্রসহ শেষ সম্বল বিক্রি করে সেই অর্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রিন্স বলেন, এমনকি আওয়ামী সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কোটা নির্ধারণ রেখে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের পুরো টাকা কাজে ব্যয় না করে আত্মসাতের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো রড, সিমেন্ট না দিয়ে বালি-মাটি এবং পুরনো ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করার ফলে হস্তান্তরের আগেই সেগুলো ধসে পড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ও বশংবদ এবং বরাদ্দ কমিটি, ঠিকাদার, সাপ্লাইয়ার সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। তাই ভূমিহীন ও গরিবের ঘর নিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও প্রতারণা তারাই করেছে।

তিনি বলেন, সরকারি খরচে ঘর নির্মাণের প্রজেক্ট থাকলেও অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ৩০ থেকে ৮০-৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের ঘরের নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়, পরিবহন খরচ, নির্মাণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক, নিয়মিত খাবারের খরচ দিতেও বাধ্য করা হয়েছে। গরিব মানুষদেরকে এই ঘর পাওয়ার আশায় উপজেলা প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা, তাদের সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থক ও ঠিকাদারদের পর্যন্ত দফায় দফায় অর্থ-চাঁদা দিতে হয়েছে।

প্রিন্স বলেন, এমনকি ঘর নির্মাণের ইট, বালি, সিমেন্ট, রড, কাঠ, রং ইত্যাদি সরকারি দলের লোকদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে নেওয়া হয়েছে। তারা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করায় আজকের এই দশা। ঘরপ্রতি ৪০ ব্যাগ সিমেন্ট বরাদ্দ দেওয়ার স্থলে ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০/১২ ব্যাগ সিমেন্ট, বাকিটা বালি, মাটি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তরের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ধরা পড়লেও সরকারের মন্ত্রী, নেতারা জিরো টলারেন্সের কথা বলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা যে মহাদুর্নীতি করছেন, সেটা তারা বেমালুম ভুলে যান। জনগণের ভোট ছাড়াই মহাদুর্নীতির মাধ্যমে অনুগত প্রশাসন দিয়ে দিনের ভোট রাতে করে জোর করে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে যে সরকার, তাদের দ্বারা দুর্নীতি রোধ দূরের কথা, দেশ আজ দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহতের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রিন্স বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পর সেজান জুস ফ্যাক্টরির মালিক-কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য দায়ী মালিক-কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *