টেস্টের পর আরেক সংস্করণে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার হাতছানি। স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদুল হাসান জয় ভাসছেন খুশির জোয়ারে। তবে ভালো করেই জানেন, এটা কেবল প্রথম ধাপ। লড়াই করেই জায়গা করে নিতে হবে। সেখানে মুখোমুখি হতে হবে রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, মুজিব উর রহমানদের উঁচুমানের স্পিনের। যুব বিশ্বকাপজয়ী মাহমুদুল বললেন, সহজাত ক্রিকেট দিয়েই উতরাতে চান কঠিন এই পরীক্ষায়।
পরিবর্তনের ছড়াছড়ির মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে দলে ডাক মিলেছে মাহমুদুলের। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলেছেন স্রেফ ১৩ ম্যাচ। ২০১৯ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ দিয়ে এই সংস্করণে অভিষেক তার। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপির হয়ে ৭ ম্যাচে ২৭.১৪ গড়ে করেছেন ১৯০ রান, সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৫ রানের।
৫০ ওভারের ক্রিকেটে তার সেরাটা দেখা যায় বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে। গত বছর মার্চে আইরিশদের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে করেন ২৮৫ রান।
২০২০ সালে বাংলাদেশের যুবাদের বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান ছিল মাহমুদুলের। সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি। গত জানুয়ারিতে কিউইদের বিপক্ষেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ৭৮ রানের ইনিংসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেন আগমণী বার্তা।
ঐতিহাসিক জয় পাওয়া সেই টেস্টেই চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান মাহমুদুল। চোট কাটিয়ে বিপিএলে এসেও ভালো করে ডাক পেয়ে গেলেন ওয়ানডে দলে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মঙ্গলবারের ভিডিও বার্তায় এই তরুণ জানালেন তার প্রতিক্রিয়া।
“অবশ্যই আমি অনেক খুশি। টেস্টের পর ওয়ানডে দলেও ডাক পেয়েছি। তাই আমি যদি সুযোগ পাই, দেশের জন্য ভালো করার চেষ্টা করব।”
“সাদা বল ও লাল বলের খেলা পুরোই ভিন্ন। তিনটা ওয়ানডে আছে, এই তিনটা ম্যাচে কীভাবে আমি ভালো করতে পারি, সেটা নিয়ে ভাবছি। আমার সহজাত ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। টেস্টে একটু সময় নিয়ে ব্যাটিং করা যায়। ওয়ানডেতে ওভার নির্দিষ্ট, ওখানে হাই ইনটেনসিটি থাকে, চাপ থাকে। খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারলে, ভালো পারফরম্যান্স করা যায়। ”
চট্টগ্রামে আগামী ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি হবে ওয়ানডে তিনটি। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ হওয়ায় এই সিরিজে প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। রশিদ, মুজিব ও নবির মতো স্পিনার থাকায় বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন মাহমুদুল।
“আফগানিস্তান এখন বিশ্বের ভালো দলগুলোর একটি। ওদের টপ কোয়ালিটি স্পিনার আছে। যদি আমরা আমাদের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারি, তাহলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।”
লম্বা সময় ধরে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ডুবে ছিলেন মাহমুদুল। খেলেন জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। মাঝে ঘরের মাঠে পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের দলেও ছিলেন তিনি, দুই টেস্টের ওই সিরিজে খেলার সুযোগ পাননি যদিও। টানা লাল বলে খেলে অনুভব করছিলেন, ব্যাট সুইং একটু কমে গেছে। তবে বিপিএল খেলতে এসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পরামর্শক স্টিভ রোডসের কোচিংয়ে ঠিক করে নিয়েছেন সেটা।
“বিপিএলে যোগ দেওয়ার পর সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে ব্যাট সুইং নিয়ে কাজ করলাম। চার দিনের ম্যাচ খেলার কারণে, ব্যাট সুইং একটু মন্থর হয়ে যায়। তারপর বিপিএলে স্যারের সঙ্গে ব্যাট সুইং নিয়ে কাজ করার পর এখন সব ঠিকঠাক আছে।”
“সালাউদ্দিন স্যারের কাছ থেকে টেকনিকের কিছু বিষয় আমি শেখার চেষ্টা করছি। স্টিড রোডসও আমাকে কিছু ড্রিল দেখিয়ে বলেছেন, যখন তিনি থাকবেন না, তখনও সেই ড্রিলগুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এগুলো করলে সাদা বলে উন্নতি করা যাবে। দুই জনের কাছ থেকেই টেকনিকের কিছু বিষয় শেখার চেষ্টা করেছি। উনারা যখন থাকবেন না, তখনও আমি যেন ওই ব্যাপারগুলো কন্টিনিউ করতে পারি। এই ব্যাপারে স্যারেরা আমাকে আইডিয়া দিয়েছেন।”