অনলাইনে পোস্ট করা বিষয়গুলোর পেছনের উদ্দেশ্য মূল্যায়ন করে আসল মতলব বোঝা সম্ভব হয়।
গবেষণা করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের ‘লাফবরাহ ইউনিভার্সিটি’র দুই গবেষক অ্যান্ড্রু চ্যাডউইক এবং ক্রিস্টিয়ান স্টেট দেখতে পান- বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত ভুল ও অসত্য তথ্যের শিকার হন।
এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে গেলে জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। তবে এটা ঠিক যে, সত্য সংবাদের উৎস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভর করা যায় না। তাই ‘অসত্য খবর’ চিহ্নিত করার পন্থাগুলো জানা থাকা প্রয়োজন।
সাধারণত দুই ধরনের অসত্য খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
এই দুই গবেষক ব্যাখ্যা করেন, “একটা হলে ‘মিসইনফরমেইশন’ বা ভুল তথ্য অন্যটি হল ‘ডিসইনফরমেইশন’ বা রটনা বা গুজব।”
কোনো ব্যক্তি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নির্দিষ্ট কোনো পেইজ থেকে ‘মিসইনফরমেইশন’ বা ভুল তথ্য প্রকাশ করার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য থাকে। সাধারণত প্রতারণা ষড়যন্ত্র মূলক তথ্য, বানোয়াট প্রতিবেদন বা ব্যাঙ্গাত্মত তথ্য দিয়ে এটা করা হয়।
সাধারণত কোনো জনমত গড়ার উদ্দেশ্যে এই ধরনের ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়।
অন্যদিকে ‘ডিসইনফরমেইশন’ বা গুজব ছড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে ঠকানো। আর সাধারণত ভুল তথ্য ছড়ানোর কৌশলগুলোই এই ক্ষেত্রে ফলানো হয়।
যে কোনো ধরনের অসত্য খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা মানে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। কারণ অনেক মানুষই তথ্য যাচাই বাছাই না করে ‘শেয়ার’ করা শুরু করেন।
তাই এই গবেষকদ্বয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন।
ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট
যদি ‘ফলো’ করা কোনো ব্যক্তির দেওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ জাগে তবে তাকে প্রশ্ন করা এবং সেই হিসেবে যাচাই করা যেতেই পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাধারণত মানুষের ব্যবহারের পরিধির ওপর নির্ভর করে চলে, এখানে ভুল তথ্য বা গুজব গননা করা সম্ভব নয়। তাই অসত্য খবর চিহ্নিত করতে কিছু প্রশ্ন সাহায্য করতে পারে।
যিনি তথ্যটি ‘শেয়ার’ করছেন সেটা কি ব্যক্তিগত আবেগ নাকি পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে করছেন?
‘কনটেন্ট’টি কোনো বিষয়ের দিকে নজর দিচ্ছে।
তথ্যগুলো কি যুক্তিসঙ্গত?
খবরে বিশ্বাসযোগ্য কোনো উৎসের কথা বলা আছে কি-না?
যে অ্যাকাউন্ট থেকে ‘শেয়ার’ করা হচ্ছে, তার জন্য সেটা কতটা গুরু্ত্বপূর্ণ?
ব্যবসায়িক বা পেশাদার অ্যাকাউন্টস
বর্তমানে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সফল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। আর এটা প্রচরণার একটা কৌশল হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে অনেকে সময় সর্বসাধারণকে অনেক সময় নির্দিষ্ট ক্রেতা শ্রেণিকে চিহ্নিত করে তথ্য প্রচার করা হয়।
তাই কোনো বিষয়ে প্রচারণামূলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমে ঘোরাঘুরি করলে জানার চেষ্টা করতে হবে, সেটা আপনার প্রয়োজন? বাজারে কি এরকম পণ্য আরও আছে? সেগুলোর সাথে এগুলোর কার্যকারিতায় পার্থক্য কোথায়? সেবা বা পণ্য প্রদান করতে গিয়ে, ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হচ্ছে কি-না?
এক্ষেত্রে জনস হপকিন্স ইনফরমেইশন সোসাইটি ইন্সটিটিউট’য়ের নিরাপত্তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী জোয়ি ক্যারিগান বলেন, “বিশ্বস্ত ও আস্থাযোগ্য মিডিয়ার উৎসের তালিকা করে রাখা উচিত।”
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “খবর-প্রতিবেদন এবং ব্যক্তিগত অভিমতের পার্থক্য করতে হবে। সংবাদপত্রগুলো অনেক সময় নানান মানুষের মতামত প্রকাশ করে। যে কোনো পেশাদান উন্নতমানের সংবাদ সংস্থা তাদের প্রতিবেদন ও অন্যদের মতামত আলাদাভাবে প্রকাশ করে। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।”
‘ফ্যাক্ট চেকিং টুলস’ ব্যবহার করেও তথ্য যাচাই করা সম্ভব। যেমন- Snopes, PolitiFact, factcheck.org এবং Leadstories.com
ক্যারগান বলেন, “এই ধরনের ‘টুলস’গুলো মিথ্য খবর চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। তবে মনে রাখতে হবে- এই সময়ে চোখের দেখা মানেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
‘এআই’ নির্ভর ছবি, ‘ডিপ ফেইক’ করা ভিডিও ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচার করা এই সময়ে সহজ বিষয় হয়ে গেছে।
তাই ক্যারিগান বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাই আসুক সবই তীক্ষ্ণ নজরে সন্দেহ নিয়েই দেখতে হবে। যে কোনো খবর দেখেই ঝাপায় পড়ে বিশ্বাস করা যাবে না। আবার এটাও মনে রাখতে হবে- জনজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা যখন অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সরাসরি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বা শেয়ার করা শুরু করে সেগুলোর ক্ষেত্রে তথ্য ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকে।”