স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকলে সুখ নাও মিলতে পারে।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে চড়াই উৎরাই থাকবেই। অধিকাংশ সময় পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকাটাই মূখ্য।
পরস্পরের প্রতি আস্থা, সম্মান, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি মিলেই সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তবে গবেষণা বলছে আরেকটি বিষয়ের কথা, যা সকল সুখী দম্পতিদের মাঝে দেখা যায়। আর সেটা হল সংসারে তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব বা দাপট।
জার্মানির ‘মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটি হালো-উইটেনবার্গ (এমএলইউ)’ এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্যামাবার্গ’ মোট ১৮১টি দম্পতির সঙ্গে আলোচনার করেন এই গবেষণার জন্য।
গড় হিসাবে এই দম্পতিদের প্রত্যেকের সম্পর্কের বয়স আট বছর। আর তারা সবাই কমপক্ষে এক মাস ধরে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন।
১৮ থেকে ৭১ বছর পর্যন্ত সব বয়সের মানুষ এই গবেষণায় ছিলেন।
গবেষণায় আলোচনা করা হয় তাদের দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা, যৌন জীবনে সন্তুষ্টি, অত্যাচারের শিকার কি-না, পারিবারিক বিধিনিষেধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা, সম্পর্ক ধরে রাখতে পরস্পরের চেষ্টার মাত্রা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কে কে বেশি ক্ষমতাবান, সেই ক্ষমতা আসলেই আছে নাকি কেউ একজন শুধুই ভাবছে যে তার ক্ষমতা আছে এবং সম্পর্কের ওপর এদের প্রভাব কী রকম সেটা জানাই ছিল গবেষকদের উদ্দেশ্য।
ড. রবার্ট কোর্নার এমএলইউ’য়ের ‘ইন্সটিটিউট অফ সাইকোলজি’ একজন গবেষক।
তার বিবৃতিতে অনুসারে বেস্টলাইফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, “দাম্পত্য জীবনে স্বামী–স্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায় সেটাও আমরা বের করেছি। ক্ষমতার সেই ভারসাম্য বজায় থাকলে দুজনেই দুজনার প্রতি একই রকম আচরণ করতে দেখা গেছে।”
গবেষণার দেখা যায়, “যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাদের সম্পর্কে ক্ষমতাবান হয় কিংবা মনে করে যে তাদের ক্ষমতা সমান, তবে সেই সম্পর্ক সুখের হয়। এখানে ক্ষমতা মানে হল একজন সঙ্গী অপর সঙ্গীকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এবং সম্পর্ক বহির্ভূত কোনো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে ওই নারী কিংবা পুরুষ কতটুকু প্রতিহত করতে পারে।”
“অর্থাৎ সংসারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে যার মতামতের গুরুত্ব ও প্রভাব থাকে, যার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে সেই সম্পর্কে ক্ষমতাবান।”
আরেক গবেষক, অ্যাস্ট্রিড শুটজ বলেন, “আসলে কতটুকু ক্ষমতা আছে তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন মানুষ তার কতটুকু ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে।”
“সুস্থ সম্পর্কে গড়ে তোলার জন্য যা প্রয়োজন তার সঙ্গে এই মতবাদ সাংঘর্ষিক মনে হলেও আসলে তা না হওয়া সম্ভব। কোথায় বেড়াতে যাবেন সেটা যদি স্ত্রী নির্ধারণ করেন, তবে কোথায় খাবার খাওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত থাকবে স্বামীর ওপর।”
“ক্ষমতার ভারসাম্য এভাবেই বজায় থাকবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি দাম্পত্য জীবনে কিছু না কিছু সিদ্ধান্ত নেন তবে দুজনেই ক্ষমতা রাখেন, আর সুসম্পর্ক গড়তে এইটুকু ক্ষমতাবান অনুভূতিই যথেষ্ট।”
কোর্নার বলেন, “সম্পর্ক সুখের হতে হলে দুই পক্ষেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা ও যোগ্যতা দুটোই থাকা উচিত। অন্যথায় একপক্ষ নিজেকে অবহেলিত মনে করবে। আর বৈবাহিক সম্পর্কের মান নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।”
কোর্নার আরও বলেন, “আগেকার সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষই ছিল পরিবারের সকল সিদ্ধান্তের মালিক। তবে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এর অনেকটাই বদলে গেছে। বিশেষ করে পাশ্চাত্য সমাজে প্রেমের সম্পর্ক থেকে বৈবাহিক সম্পর্কে রূপ নেওয়া সম্পর্কগুলো দুজনেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা থাকে সমান।”
“লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্বের ধারণায় পরিবর্তন আসলেও তা সমাজের সকল শ্রেণীকে স্পর্শ করতে পারেনি। পুরুষ আজও অনেক পরিবারের সর্বেসর্বা। আর সেই প্রেক্ষাপটগুলোতে পুরুষ শিক্ষা ও উপার্জনের দিক থেকে সবার ওপরে। আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার চাহিদা পুরুষেরই বেশি।”
গবেষকরা আরও জানান, তবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কের মানকে খুব কমই প্রভাবিত করে। অনেক নারী সম্পর্কের ক্ষমতাধর ব্যক্তির মর্যাদা তার স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে সুখী আছেন। তার মানে এই নয় যে সংসারে স্ত্রীর সিদ্ধান্ত মূল্যহীন।