অর্থনীতি

সুড়ঙ্গ তৈরি সম্পন্ন, নির্ধারিত সময়ের আগেই চালু হতে পারে বঙ্গবন্ধু টানেল

নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে কর্ণফুলী নদীর নিচে সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় চ্যানেলের খননকাজ। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ এই চ্যানেলের খননকাজ শেষ হয়। পূর্ব ঘোষণা অনু্যায়ী, চ্যানেলটির মুখ খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার।

২০২০ সালের ২ আগস্ট শুরু হয় বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম চ্যানেলের খননকাজ। দ্বিতীয়টির খননকাজ শুরু হয় একই বছরের ১২ ডিসেম্বর। আগেই টানেলের প্রথম চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হয়েছিল। আর ১০ মাসের খনন কার্যক্রমের পর অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয় দ্বিতীয় চ্যানেলের খননকাজ। এর মধ্যে দিয়ে টানেলের দুটি সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য বাড়তি জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিতে অত্যাধুনিক নানা যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে কাজের গতি অনেকটাই বেড়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রায় ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে দুই সুরঙ্গের খননকাজই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। সুরঙ্গ খনন শেষ হওয়ায় আনুসাঙ্গিক বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদী তারা।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, নির্মাণকাজ শেষে শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাতে বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হবে। আগেই টানেলের প্রথম চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে দুই চ্যানেলেরই নির্মাণকাজই শেষ হবে। এ সময় তিনি আরও জানান, আগামী বছরের ২২ ডিসেম্বর টানেল চালুর কথা ছিল। এখন মনে হচ্ছে এরও আগে এটা চালু করতে পারবো।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ টানেল। দেশের প্রথম টানেল প্রকল্প এটি। টানেলটি নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে অপর প্রান্তে যাবে। নদীর তলদেশে সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট গভীরে স্থাপন করা হবে দু’টি টিউব। এছাড়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়েছে।

নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম টানেলটি নির্মাণ করছে সরকার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর টানেলের বাম সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ২০২১ সালের নভেম্বরে উভয় সড়ক এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। টানেলটি নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, নৌ বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

জানা গেছে, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ করছে। ৯ হাজার ২৯৩ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রাস্তাসহ প্রকল্পটি দ্বিমুখী ৪ লেন মডেল অনুসরণ করে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৩১৫ মিটার। ফ্লাইওভার ও সংযোগ সড়ক যথাক্রমে ৭২৭ মিটার এবং ৫ হাজার ৩৪১ মিটার। দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *