একাত্তরে বাংলার মুক্তির যুদ্ধ রূপ নিয়েছিল জনযুদ্ধে; অস্ত্র হাতে সবাই লড়েননি, কিন্তু নানা আঙ্গিকে লড়াই চালিয়েছেন সবাই। তাদেরই একজন তিমির নন্দী। মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে কণ্ঠ দিয়ে লড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অস্ত্র হাতেই যুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন তখনকার কিশোর শিল্পী তিমির নন্দী; পরে মায়ের নির্দেশে কলকাতার বালিগঞ্জে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়ে গানে গানে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়।
তার ভাষায়, তাদের সেই গান ছিল ‘বুলেটের মতো’, যা উজ্জীবিত করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের।
তিমির নন্দীদের সংগ্রামের ফল স্বাধীন বাংলাদেশ পেরিয়ে এসেছে ৫০ বছর। ৫১তম স্বাধীনতা দিবসের ক্ষণে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসায় মুখোমুখি হলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে যুদ্ধদিনের স্মৃতি শোনালেন তিনি; সেই সঙ্গে জানালেন আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান।
একাত্তরের মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলো কেমন দেখেছিলেন ?
তিমির নন্দী: আমি তখন কিশোর ছিলাম। সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেই আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। সেই সময়ে আমার ভাই তরুণ কুমার নন্দীর শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা। ২৫ মার্চের কালরাত নিজের চোখে দেখা হয়নি। কুড়িগ্রামে থাকার সময় আমার বেয়াই দেবব্রত বসুর সঙ্গে কুড়িগ্রামে গান করেছিলাম। দেবব্রত কুড়িগ্রামের নামকরা গায়ক, নাট্যকার ছিলেন। আমি বয়সে কিশোর হলেও রেডিও ও টিভিতে গান করার সুবাদে মুল্যায়ন করা হয়েছিল। মার্চেই সেখানে একটি গানের দল করলাম; গণসংগীত ও দেশের গান পরিবেশন করতাম।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে হাটে, ঘাটে, মাঠে গান পরিবেশন করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতাম। এর মাঝে পাকিস্তানি আর্মি রংপুর চলে এলো; আমাদের সেখান থেকে সরে যেতে হবে। দেবব্রতদা সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি বাকুয়াতে আমরা চলে যাব। পরদিন সন্ধ্যায় গাড়িতে চেপে দুই পরিবারের পরিবারের সদস্যরা বাকুয়ায় পৌঁছালাম। এত সুন্দর গ্রাম! সন্ধ্যা নামলেই সেখান থেকে আসামের গারো পাহাড় দেখা যায়, আর দেড় মাইল দূরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ।
সেই বাকুয়া থেকেই আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। রোজ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে গ্রামের মানুষ খেয়ে শুয়ে পড়ত। তার উপরও যুদ্ধের মধ্যে সবাই একটু সতর্ক ছিল। আমরা কয়েকজন যুবক ও কিশোর, দুয়েকজন মুরব্বিও ঘরের মধ্যে আস্তে ভলিয়্যুমে রেডিও ছাড়তাম। রেডিওতে কান পেতে বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, তারপরে আকাশবাণী শুনতাম।
খবরে শুনতাম, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ-সবাইকে তারা হত্যা করছে। এসব খবরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মনের ভেতরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল।
রেডিও শুনে ঘরে শিকল লাগিয়ে আমগাছের ডালে হ্যাজাক ঝুলিয়ে আমরা ক্যারাম খেলতাম। আর পাকিস্তানি আর্মি, রাজাকার, আল শামসদের থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে লাঠি নিয়ে গ্রাম পাহারা দিতাম। লাঠি হাতেই আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আমাদের কোনো অস্ত্র ছিল না। সাতই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু তো বলেই গেছেন, যার হাতে যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নামতে হবে।
এর মধ্যে একদিন মাকে বললাম, মা, আমি এইভাবে বসে থাকতে পারব না। আমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাব।
সেই সময় মেজ ভাই ঢাকায় ছিলেন ও মেজ বোন কুষ্টিয়ায়। তাদের কোনো খবর মিলছিল না। আগে টেলিগ্রামে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলেও যুদ্ধের মধ্যে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দাদা ও দিদির জন্য মায়ের মন অশান্ত থাকায় তখন মা আর কিছু বললেন না আমাকে।
কুড়িগ্রাম থেকে আসাম হয়ে কলকাতা গেলেন ?
তিমির নন্দী: হ্যাঁ। কয়েকদিন পর আবার খবর এল, পাকিস্তানি আর্মিরা তৈরি হচ্ছে; বাকুয়া গ্রামে ঢুকে পড়বে। পরে তখন ঠিক করা হল, নৌকা ভাড়া করে আসামের ধুবরিতে এক আত্মীয়ের বাসায় যাব। বিশাল একটা নৌকা ভাড়া করা হল। নৌকার মাঝ বরাবর একটা ডিভিশন দিয়ে একপাশে ছেলেরা আরেকপাশে মেয়েরা ছিল।
নৌকার গুন টেনে টেনে দুই দিন, দুই রাত চলে গেছে, যাত্রাপথে আমরা খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। দিনের বেলা তাও তো সামনে কী আছে, দেখা যাচ্ছিল; কিন্তু রাতের বেলা কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। রাতে সামনে কোনো নৌকা আসার শব্দ পেলে মাঝি হাঁক দিয়ে জানতে চাইছিলেন, ‘কে যায়?’ ওপাশ থেকে পালটা হাঁক আসে, ‘মানুষ যায়’।
চাল-ডাল ফুরিয়ে এল; নৌকা ভিড়িয়ে নামতে হত। পথঘাট কেউ চিনত না। এভাবে ভয়ের মধ্যে কেটেছে আমাদের দুই দিন-রাত। ধুবড়িতে পৌঁছার পর এক বাসায় আমাদের জায়গা হচ্ছিল না, কয়েকটি বাসায় মিলিয়ে আমরা রাত্রিযাপন করেছিলাম।
পরদিন শিয়ালদা এক্সপ্রেসে কলকাতা চলে গেলাম। কলকাতায় আসার পর মাকে আবার বললাম, আমি যুদ্ধে যাব। মায়ের পেছনে কয়েকদিন খুব লেগে থাকলাম।
শেষ পর্যন্ত মাকে রাজি করালেন কীভাবে ?
তিমির নন্দী: কলকাতায় যাওয়ার পর একদিন সকালে আনন্দবাজার পত্রিকা পড়তে গিয়ে একটি ছবিতে চোখ আটকে গেল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৭ কিংবা ১৭ বছর বয়সী এক যুবক তার বাবার পায়ের কাছে অস্ত্র রেখে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। ছবিটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকাটা দেখিয়ে মাকে বললাম, এই ছেলে যুদ্ধ করতে পারলে আমি কেন পারব না। তখন মা বললেন, “তুমি যখন যুদ্ধ করতে চাচ্ছ, তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যাও। সেখানে অনেককেই পাবে, যাদের তুমি চেন।”
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গিয়ে কাদের পেলেন ?
তিমির নন্দী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কোথায় সেটাই তো আমি জানতাম না। মেজ দাদা কলকাতায় এলে তার কাছে খোঁজ পেয়েছিলাম, কলকাতার বালিগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। দুইতলা একটি বাড়ি। প্রথমে সমর দাস দাদাকে পেলাম। তিনি মেজদার শ্বশুরের বন্ধু। পেয়েছিলাম অজিত রায়কে; তিনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। আব্দুল জব্বার, কাদেরী কিবরিয়া, অরূপ রতন চৌধুরী, সুজেয় শ্যাম, লাকী আখান্দসহ আরও অনেককে পেলাম যাদের সঙ্গে আমার পরিচিতি ছিল।
সবাই মিলে একটি মাইক্রোফোনে গান রেকর্ড করতাম। ঘাড়ে হাত দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গান করতাম। তখন আমি আশায় থাকতাম, কখন একটি গান পাব। মুষ্টিমেয় কয়েকটি একক গান গেয়েছেন জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা। আমি কোরাস গানগুলো করতাম।
প্রত্যেক শিল্পীই কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। আমিও একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যিনি পরিচালনা করতেন, মন্ত্রী আব্দুল মান্নানেরও একটি সংগঠন ছিল। কলকাতার নারকেলডাঙ্গা থেকে পরিচালিত শরণার্থী শিল্পীগোষ্ঠী নামে সেই সংগঠনের সদস্য ছিলাম আমি। মামুনুর রশিদ, মিতালী মুখার্জি, দীপা দাস, কমল সরকারসহ আরও অনেককে পেয়েছিলাম।
শরণার্থী শিল্পীগোষ্ঠীতে আপনার সেই দিনগুলো কেমন ছিল ?
তিমির নন্দী: মুক্তিযুদ্ধকালীন তহবিল সংগ্রহে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় আমরা অনুষ্ঠান করেছি, রবীন্দ্রসদনে গান করেছি; সীমান্তে এসে গান করেছি। অক্টোবরের দিকে কলকাতার এক পূজামণ্ডপে শরণার্থী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে একটি গান করেছিলাম। পরদিন সকাল পৌনে দশটায় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আকাশবাণীর সংবাদ পরিক্রমা শুনছিলাম। হঠাৎ তিনি আমার নামটি বলে সেই গানের দুই লাইন বাজালেন। আমি তো আনন্দে আত্মহারা; বাসার সবাই চমকে গেলেন। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন নমস্য মানুষের কণ্ঠ থেকে আমার নামটি প্রকাশিত হওয়া অনেক বড় পাওয়া।
বালিগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ফিরি; সেখানকার দিনগুলো কেমন ছিল ?
তিমির নন্দী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যে গানগুলো করেছি, আপনারা জানেন, গানগুলো বুলেটের মতো কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছে। আপেল মাহমুদ ভাইয়ের ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গানটি শুনে একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শুনে মনে হত এই বাংলাদেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্তি করতেই হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যেভাবে পরিচালিত হয়েছে সারা পৃথিবীর ইতিহাসে বেতার যন্ত্র দিয়ে এমন কোনো যুদ্ধ হয়েছে কি না-আমার জানা নেই।
যাদের অস্ত্র ছিল গান
স্বাধীন বাংলা বেতারের স্লোগান, গান গেরিলা যুদ্ধের সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গেরিলা যোদ্ধাদের বলা হয়েছে, এই গানটি যখন বাজবে তখন ওই ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে হবে। এই স্লোগানটি যখন প্রচারিত হবে, তখন এই শিপটি উড়িয়ে দিতে হবে। এগুলো সিগন্যাল দেওয়া থাকত। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
যে ১০ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ট্রান্সমিটারটা আগরতলা হয়ে কলকাতায় নিয়ে যান, আমি তাদেরকে সবসময়ই স্যালুট জানাই। তারা যদি এটি না করতেন, তাহলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্ম হত না।
স্বাধীন বাংলা বেতারের আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা বলি। ১৬ ডিসেম্বরের সকাল থেকে একটি গানের রিহার্সেল করছিলাম; সুজেয় শ্যাম সঙ্গে ছিলেন। বেলা ২টার দিকে খবর পেলাম, ঢাকায় পাকিস্তানিরা সারেন্ডার করেছে। শুনেই আমরা উল্লাসে ফেটে পড়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকলাম। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাসছি, কাঁদছি। দেশটা স্বাধীন হয়েছে, এর জন্য আনন্দ অশ্রু ঝরেছিল। সঙ্গে স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নাও ছুঁয়েছিল আমাদের।
আরেকটি বিষয় ছিল, তখনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন, তাকে কীভাবে আমরা ফিরে পাব, সেটা নিয়েও বেদনা কাজ করছিল। আমরা মুক্তি পেয়ে গেলাম কিন্তু তিনি পেলেন না।
সেইদিন আমাদের আশেপাশে কলকাতাবাসীদের মধ্যে যারা ছিলেন তারাও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে রাজপথে নেমে আসেন।
তখনই আমাদের শহিদুল ইসলাম ভাই লিখে ফেললেন, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’, সুজেয় শ্যাম সুর তুললেন। ২০ মিনিটের মধ্যে গানটা রেকর্ড করলেন। গানে লিড করলেন অজিত রায়; সঙ্গে আমরা ১৭ জনের মতো গানটা রেকর্ড করলাম। বেতার কেন্দ্র থেকে কলকাতার বাসায় ফেরার পথেই শুনলাম, সেই গানটি বেজে উঠল। পরে শুনেছি, কাকতালীয়ভাবে সেই গানটি বাজার সময়ই ঢাকায় সারেন্ডার করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
যুদ্ধ থেকে ফিরে কেমন ঢাকা দেখেছিলেন ?
তিমির নন্দী: তখন আমাদের বাসা ছিল লালমাটিয়ায়। ঢাকায় ফিরে দেখি, সেই বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি আর্মি, বিহারিরা বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে। আমার ছোটবেলার ছবি, মেডেল, সার্টিফিকেটগুলো আর পাইনি। আমাদের বাসায় লুটপাট হয়েছে, বোমা ফেলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে, তার থেকে বড় কথা পুরো দেশেই এমন বর্বরতা চালিয়েছে পাকিস্তানিরা।
অনেকে আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন; যাদের হারায় তারাই শুধু বোঝেন। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশটিকে বিভাজন করা হয়েছে। একটি স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি আরেকটি পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মা। প্রত্যেকটা দেশের জাতির পিতা থাকেন, যখন জাতির পিতাকে নিয়ে বিতর্ক হয় তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
যখন দেখি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়, হিন্দু-বৌদ্ধদের সম্পদ ধ্বংস করা হয়, তখন কষ্ট লাগে। একাত্তরে সব ধর্মের মানুষই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। দেশটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেরে শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন ?
তিমির নন্দী: বিষয়টি নিয়ে আজকেই ভাবছিলাম। হ্যাঁ, সরকার শিল্পীদের জন্য কিছু কাজ করছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মুষ্টিমেয় কয়েকজন, আমাদের একটা লিস্টই আছে। অনেকের নাম হয়ত নেই। কিছু শিল্পী হয়ত নিজেদের যোগ্যতায় পরিচিত পেয়েছে। আমাদের মানুষ চেনে। কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনেককে চেনে না।
আমরা কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। আমরা দেশটা আর মানচিত্র পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধ করেছি। সরকার আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছেন; আমরা সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ।
আর হ্যাঁ, শিল্পীদের মধ্যে অনেক আছেন যারা এখনও অসচ্ছল; তাদের আরও সাহায্য করা উচিৎ। প্রতি মাসে তাদের কাছে একটি অ্যামাউন্ট যাচ্ছে। আর কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সেটা জানি না।
তবে আমার একটা ইচ্ছা ছিল, দেশে সাংবাদিক কলোনি হয়, ব্যাংক কলোনি হয়, সেই রকম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের নিয়ে যদি একটা কলোনি হত। সবাই মিলে পরিবারের মতো একটা জায়গায় থাকতে পারলে ভালো হত। সেটা একটা চাওয়া ছিল। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। মূল্যায়ন বলতে যদি রাষ্ট্রীয় পদকের কথা বলি, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে কণ্ঠ দিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করা উচিৎ।
স্বাধীনতার পর পঞ্চাশ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশে; আগামীর বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে চান ?
তিমির নন্দী: প্রথমত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই।সে খাচ্ছে, আমি খাব- এই ধরনের টেন্ডেন্সি না। বলা যায়, এমন একটা মানুষ নেই যে দুর্নীতি করছে না। যে দিচ্ছে সে যেমন অপরাধী, যে খাচ্ছেও সেও অপরাধী। দুর্নীতি বন্ধ হলে ভালো হবে। অসহায় মানুষ যারা তাদের সরকারি সাহায্যের আশায় গেলেও টাকা দিতে হয়। এরকম বাংলাদেশ কিন্তু আমি চাইনি। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার ছিলেন। ঠিক তেমনি সোনার বাংলা দেখতে চাই। কোনো বিভাজন থাকবে না। এক নেতা, এক দেশ এবং সবাই হবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। সেইভাবেই দেশ এগিয়ে যাবে। তেমনই একটা দেশ দেখতে চাই।