জাতীয়

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যা বললেন ইভ্যালি পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা

হাইকোর্টে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা। বুধবার ওই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় তারা বলেন, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে প্রতারণা করার উদ্দেশেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গঠন করা হয়েছিল। বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল।

তবে ই-কমার্সভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু হবে কি না, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মতামত দেয়নি বোর্ড।

আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এ তথ্য জানান পরিচালনা বোর্ডের প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

বুধবার পদত্যাগ করা ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির গঠিত হয়েছিল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার উদ্দেশে। এর নেপথ্যে ছিলেন সিইও রাসেল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের পাশাপাশি ক্যাশব্যাকের অফার দিয়ে আলোড়ন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইভ্যালি নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে বিপাকে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পারেননি। তাই প্রতারণার মামলা হলে গ্রেফতার করা হয় রাসেল এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে। এরপর আদালতের নির্দেশনায় গঠিত হয় নতুন পরিচালনা বোর্ড।

এদিন ইভ্যালির দায়িত্ব ছেড়ে দেন হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড। বুধবার তাদের পদত্যাগপত্র বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন কোম্পানি বেঞ্চে দাখিল করা হয়। একই সঙ্গে পরিচালনা বোর্ডের অডিট রিপোর্ট ও প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্ধারিত দিনে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বুধবার বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল কোম্পানির অডিট রিপোর্ট ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা, আজ আমরা তা দাখিল করেছি।

ইভ্যালির পুরো ঘটনার জন্য কোম্পানির এমডি রাসেলকে দায়ী করে তিনি বলেন, রাসেল শুরু থেকেই প্রতারণামূলক অভিসন্ধি নিয়ে এই কোম্পানিটা করেছিলেন। তার ইচ্ছা কখনই ভাল ছিল না। তার ইচ্ছা ছিল মানুষকে ঠকানোর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা। রাসেল কোনো নিয়মনীতি মানতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে কখন কাকে কত টাকা দিয়েছে কোনো হিসাব নেই। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করছি এখানে অর্থ পাচার হতে পারে, সেটারও তদন্ত হওয়া দরকার।

বিচারপতি মানিক বলেন, উচ্চ আদালত আমাদের আরেকটি দায়িত্ব দিয়েছিল যে, যদি আমরা মনে করি কোম্পানি আর চলবে না, তাহলে সেটাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা। কিন্ত সেটা আমরা করিনি এই জন্য যে, এখানে শত শত মানুষের ভাগ্যের বিষয় জড়িত।

তিনি বলেন, কোম্পানির বর্তমান যে আর্থিক অবস্থা, তাতে কোম্পানি আর চালাতে পারবে না। যদি চালাতে হয় তাহলে নতুন কোনো বিনিয়োগকারী আসতে হবে। যদি কেউ এগিয়ে আসে তাহলেই কোম্পানি চলতে পারবে।

অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, জড়িতরা টাকাগুলো কি করেছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এই কোম্পানিতে বর্তমানে জিনিসপত্র এবং নগদ মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে পঞ্চাশ কোটি টাকার মত রয়েছে। সেই টাকা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না, কারণ পাওনাদারের সংখ্যা অনেক বেশি।

বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও বলেন, আজ আমরা রিজাইন (পদত্যাগ) করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। গতকাল নয়, আজ (বুধবার) আমরা পদত্যাগ করেছি এবং পদত্যাগপত্র হাইকোর্টে জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনে ২১ সেপ্টেম্বরের স্বাক্ষর রয়েছে। ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আদালতের নির্দেশে পাঁচজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ।

এদিকে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইভ্যালির পরিচালা বোর্ডের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমদিন বোর্ড মিটিং শুরুর আগে অফিস পরিদর্শনকালে কোনো কক্ষেই চেয়ার, টেবিল ছাড়া কম্পিউটার, ফানির্চার, ল্যাপটপ পাওয়া যায়নি। এমনকি সব সিসি ক্যামেরার ডাটা রেকর্ডারও পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

গত ১০ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করার বিষয়ে আদালতের নির্দেশে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। একই আবেদনে শামীমা এবং তার মা ও বোনের স্বামীকে পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *