আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) কথার অর্থ বিগত নির্বাচনগুলো সঠিক ছিল না। তাহলে কি বলবো আগের নির্বাচনগুলোতে ডাকাতি হয়েছে। আমরা ভোটারবিহীন সরকার দেখেছি। ১৫৪ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়লাভ করেছিল। আর উনি বলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। একথা আমরা কেন এদেশের জনগণ কেউ বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের একটাই দাবি অবিলম্বে পদত্যাগ করেন, সংসদ বাতিল করেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, লেভেল প্লেইং ফিল্ড হোক, আপনারা রাস্তায় আসেন, সেইখানে আমাদের পরীক্ষা হবে। ’
রোববার বিকালে বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন ।
মহানগর উত্তর ৮ জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
এই সমাবেশে গুলশান-বাড্ডা-রামপুরা থানার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসংখ্য নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে অংশ নেয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও এবিএম রাজ্জাকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, আমিনুল হক, আব্দুল আলীম নকী, মুনসী বজলুল বাসিত আনজু, শামসুল হক, তহিরুল ইসলাম তুহিন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।
সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচারের কারণে জ্বালানী তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, আজকে আমরা যে কারণে সমাবেশ করছি এটা বিএনপির কোনো ইস্যু নয়, এটা এই দেশের সব মানুষের ইস্যু। সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচারের কারণে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সরকার হঠাৎ করে শতকরা ৫০ভাগের বেশি জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এর সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। আওয়ামী সিন্ডিকেট নিত্যপন্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আজকে লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অর্থনীতি ধ্বংসের কিনারায় চলে গেছে। এর একমাত্র কারণ সরকারের দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার।
তিনি বলেন, এই সরকার দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে সেজন্য সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আজকে গরীব-খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে হাড়ির আগুন জলছে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলতে চাই আপনারা আপনাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খবর নিয়ে দেখুন তাদের হাড়িতে কি জুটছে। এমনি একটি দুরাবস্থার মধ্যে দেশ নিপতিত।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে ড. মোশারফ বলেন, আমি মনে করিয়ে দিতে চাই ৭২ থেকে ৭৫সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী। আবার আজকের যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বিনাভোটে একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আর একবার ভোট ডাকাতি করে হয়েছেন। সারা পৃথিবীর কেউ গত নির্বাচনকে নির্বাচন বলে না। সে কি না বলে আওয়ামী লীগের সময় নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়। আমি বলতে চাই যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্রকে তারা বারবার হত্যা করেছে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে। ১৯৭৪সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আর বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্রকে বার বার পুনরুদ্ধার করা।
জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকারকে হঠাতে হবে। তাই আমাদের সামনে একটাই টার্গেট। এই সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে লেভেল প্লেইং ফিল্ডে নির্বাচন করতে হবে। কোনো ইভিএম মার্কা ডাকাতি চলবে না। জনগণ নিজের হাতে নিজের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।