অর্থনীতি

অনুদানের চিকিৎসাসামগ্রী খালাসে অনিশ্চয়তা

অর্থ সংকটের কারণে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ও অনুদানসামগ্রী বন্দর থেকে খালাস অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকায় পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোদ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরে কাস্টম শুল্ক পরিশোধের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে।

অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি অবহিত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠি পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় অর্থের অঙ্কটি যাচাই-বাছাই করা হবে।

প্রকৃত অর্থে যে টাকা দরকার, তা বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে চিঠি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছে।

এর আগে কাস্টম শুল্ক পরিশোধের জন্য ২৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে প্রয়োজন ২৫ লাখ টাকা। এ কারণেই এবারও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপান সরকারের দেওয়া ৭৭ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে।

কাস্টম শুল্কের টাকা সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে বরাদ্দ না থাকায় ৫ মাস ধরে খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে এক্সরে যন্ত্র, রোগীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মনিটর, সিটি স্ক্যানার, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি বা ইসিজি যন্ত্র, ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইজার ও অক্সিজেন জেনারেটর বাংলদেশকে দিয়েছে জাপান।

পণ্যসামগ্রীর তালিকায় আরও রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স ও ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক। সব মিলিয়ে চিকিৎসা সরঞ্জামের সংখ্যা ৩১৩।

এসব পণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে কাস্টম শুল্ক বাবদ প্রয়োজন ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই অর্থ চেয়ে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয় অর্থ বিভাগকে।

এদিকে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগকে লেখা চিঠিতে স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, শুল্কায়নের মাধ্যমে বন্দর থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম খালাস করা হয়।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। যে কারণে মালামাল খালাস করতে বিলম্ব হয়। সেখানে আরও বলা হয়, বন্দরে খালাসের জন্য মালামাল পড়ে থাকলে এর গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। চিঠিতে আরও বলা হয়, এদিকে শিগগিরই দেশে এসে পৌঁছবে বিদায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্রয়কৃত পণ্য।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট আর্থিক কোডে আগ থেকে বরাদ্দ না থাকলে পণ্য ছাড় বিলম্ব হবে। এতে পোর্টের জরিমানাও বাড়বে। বিগত বছরে এ ধরনের জটিলতার কারণে পোর্টের জরিমানা গুনতে হয়েছে।

ওই অর্থবছরে দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর অনুদানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম গ্রহণ করতে কাস্টম শুল্ক বাবদ ব্যয় হয় ১৭০ কোটি টাকা।

তবে অর্থ পরিশোধ বিলম্বের কারণে পোর্ট ডেমারেজ ৫ কোটি টাকা গুনতে হয়েছে। ফলে আগে অভিজ্ঞতার আলোকে চলতি অর্থবছরের চাহিদা পূরণের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের আবেদন করা হলো।

এ খাতে দ্রুত বরাদ্দ নিশ্চিত হলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ক্রয়কৃত ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যসামগ্রী দ্রুত খালাস করা যাবে। এতে রোগীদের কল্যাণে এসব পণ্য ব্যবহার সম্ভব হবে।

এদিকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারকে চিঠি দিয়েছে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি)।

এতে কাস্টম শুল্ক খাতে দ্রুত অর্থ বরাদ্দের বিষয় উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, জাপানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্দরে ফেলে রাখায় দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

ভবিষ্যতে জাপানের কাছে স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা চাইলে তারা নাও দিতে পারে। প্রসঙ্গত, প্রচলিত রাজস্ব আইন অনুযায়ী সরকারের নির্ধারিত কিছু খাত ছাড়া সব পণ্যেই শুল্ককর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।

অনুদানের সরঞ্জামে শুল্ক ছাড় দিতে হলে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়। ওদিকে বন্দরের মাসুল মওকুফ করার ক্ষমতা রয়েছে শুধু নৌ প্রতিমন্ত্রীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *