যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেন ক্ষমতায় বসেন ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। ক্ষমতা নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেন বাইডেন। এর পর অনেকেই বলেছিলেন— যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো দিন যুদ্ধে জড়াবে না। আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে সেই সময় বাইডেন নিজেও বলেছিলেন— ‘এটিই যুদ্ধের চিরসমাপ্তি।’
তবে আফগানিস্তানে যুদ্ধের চিরসমাপ্তি হলেও নতুন করে ইউক্রেন যুদ্ধের বীজবপন করেছেন বাইডেন। রাশিয়াকে ইউক্রেনে হামলার জন্য উসকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ইউক্রেনকে নানাভাবে সহায়তা করে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে দেশটি। এসব দাবি করেন ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক ও সাংবাদিক জোনাথক কুইক। মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ে তার নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি মনে করেন, মূলত ইউরোপের দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্যই আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছেন জো বাইডেন। আর ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে রেকর্ড হারে সাহায্য করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। আর এ কারণেই এ যুদ্ধ থামছে না। এমন দাবি এই বিশেষজ্ঞের।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এই যুদ্ধের জন্য দায়ী তার বেশ কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো, ২০২১ সালের জুনে ইউক্রেনকে সদস্য বানানোর জন্য ন্যাটোর আশ্বাস।
ইউক্রেন অনেক বছর ধরেই ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। ন্যাটোও চায় তাদের জোট সম্প্রসারণ করতে। এদিকে রাশিয়া চায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। মূলত এই চাওয়া-না চাওয়া আর পাওয়া-না পাওয়া নিয়েই গোলযোগ বাধে।
একদিকে ইউক্রেনে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগ্রহ, অন্যদিকে রাশিয়ার নিরাপত্তা জোরদারের প্রচেষ্টা। দুইয়ে মিলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাতের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে জোনাথন কুইক উল্লেখ করেন, ন্যাটোর সদস্য না হলেও ইউক্রেনকে ন্যাটোর সব ধরনের সুবিধা প্রদান করে আসছে জোটটি।
ইউক্রেনকে গত এক বছরের কম সময়ে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা অভাবনীয়। এমনকি এ সংখ্যা ইউক্রেনের বার্ষিক সামরিক বাজেটের দেড়গুণেরও বেশি।
গত মাসে হোয়াইট হাউসে জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একইদিন মার্কিন কংগ্রেসে নায়কের বেশে শান্তির বার্তা দেন জেলেনস্কি। এ সময় তাকে তিন মিনিট দাড়িয়ে সম্মান করা হয়। যা যেকোন শান্তির বার্তাবাহকের তুলনায় ঢের বেশি।
ওয়াশিংটনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, পুতিনকে পরাজিত না করা পর্যন্ত থামবে না যুক্তরাষ্ট্র। এ কথার মাধ্যমেও বোঝা যায় আফগানিস্তানে চিরকালীন যুদ্ধের সমাপ্তি করে নতুন করে ইউরোপে একটি স্থায়ী বা চিরকালীন যুদ্ধের সূত্রপাত করেছে বাইডেন সরকার।
ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিক ইউক্রেনের সঙ্গে কৃষ্ণসাগরে সামরিক মহড়া চালিয়েছে ওয়াশিংটন। জোনাথন কুইক মনে করেন এসব কারণেই মূলত এখনো থামছে না ইউক্রেন যুদ্ধ।