বিএনপির আন্দোলনের রণকৌশল সঠিক পথে নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইসরাইল থেকে ফোনে আঁড়ি পাতার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও গোয়েন্দা নজরদারির নামে নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হরণের প্রতিবাদ এবং মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত রাজবন্দিদের মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে নুর বলেন, আপনাদের আন্দোলনের রণকৌশল সঠিক পথে নেই। বিরোধীদলের সঙ্গে বসে সঠিক রণকৌশল ঠিক করতে হবে। আপনাদের ম্যান পাওয়ার ও মানি পাওয়ার আছে। কিন্তু আপনাদের সমন্বয় হচ্ছে না। বিএনপিকে ছোট ছোট দল যেগুলোর সাপোর্ট নেই, তাদের সাপোর্ট দিয়ে কীভাবে আরও চাঙা করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটি বলেছে, তারা চার লাখ সাইবার যোদ্ধা তৈরি করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ খরচ করে তারা বিরোধী এবং ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার-গুজব চালানোর জন্য প্রতিটি আসন, উপজেলা ও ইউনিয়নভিত্তিক এ সাইবার বাহিনী তৈরি করেছে। আগামীতে বিরোধীদলের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে এ সাইবার নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্তভাবে জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সাইবার জগৎ সম্পর্কে জানতে হবে।
নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাদের নানা ধরনের ফোনালাপ ফাঁস হয় উল্লেখ করে নুর বলেন, এসব ফোনালাপের কিছু সত্যি, কিছু বানানো। সব ধরনের প্রযুক্তি এ আওয়ামী দুর্বৃত্তদের হাতে রয়েছে। কাজেই এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আগামী নির্বাচনের আগে এখন থেকেই এ কাজগুলো করবে। তাই বিরোধী মত-পথের মানুষকে এ গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
ডাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, বিরোধীদল আজ পর্যন্ত সরকারি দল কিংবা কারো ওপর আঘাত, বাসে অগ্নিংযোগ বা ভাঙচুর করেনি। ২০১৪-১৫ সালে বিরোধীদলের আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ বাসে অগ্নিসংযোগ করেছিল, পেট্রোল বোমা মেরেছিল। সরকার সেগুলোকেই বিশ্ব অঙ্গনে বিরোধীদের কাজ বলে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করেছিল। যে কারণে ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচনে বিদেশিরা সমর্থন দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সরকার কথিত জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের ট্রাম কার্ড খেলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে সাম্প্রদায়িকতার নাটক তৈরি করে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করেছে। যে কারণে তারা এতদিন পর্যন্ত বিদেশিদের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সমস্ত গণতন্ত্রকামী সভ্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের এ অসভ্য, বর্বর, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান সরকারের গদিতে কাঁপুনি ধরেছে উল্লেখ করে নুর বলেন, সরকার এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও নীল নকশা নিয়ে ব্যস্ত আছে। যেই রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না, সেই রাষ্ট্র থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে ফোনে আঁড়ি পাতার যন্ত্র কিনেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মূর্খ-অশিক্ষিতের মতো কথা বলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আইন সম্মতভাবে ফোনে আঁড়ি পাতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপনাকে দেখাতে হবে, বাংলাদেশের সংবিধানে কোথায় আপনাকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হরণ করার অধিকার দিয়েছে। আপনাকে দেখাতে হবে, আইনের কোন ধারায় আছে নাগরিকদের, বিরোধী মত-পথের মানুষের ফোনালাপ ট্র্যাপ করতে পারবেন, মিডিয়ায় প্রচার করতে পারবেন।
বর্তমান সরকারের লাইফ লাইন আর ছয় মাস আছে উল্লেখ করে নুর বলেন, এ ছয় মাসের মধ্যে যদি তারা সেইফ এক্সিট নেয় তো ভালো, নইলে তাদের পরিণতি হবে নির্মম। কাজেই আওয়ামী লীগের নেতাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিদায় নেবে, নাকি জনগণের রোষানলের মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে।
তিনি বলেন, এতদিন শুনেছেন আমাদের দেশের ভোট ডাকাত, ভোট চোর, ব্যাংক লুটেরাদের সেকেন্ড হোম হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা। কিন্তু আমি তথ্য নিয়ে বলছি, বাংলাদেশের অবৈধ সম্পদের লুটেরাদের আরেকটি স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মালেক ফরাজি, সৌরভ হোসেন, ফারুক আহমেদ, আবু হানিফ, বিপ্লব কুমার পোদ্দার, সোহরাব হোসেন, মাহফুজুর রহমান খান প্রমুখ।