রাজনীতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই বিচারককে বদলি করা হবে কিনা, যা বললেন আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের দুই বিচারককে বদলি করা হবে কিনা- সেটা দেখার এখতিয়ার সুপ্রিমকোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটির (জিএ)। সেখানে আমি কোনো কথা বলব না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। জিএ কমিটি বিচারকদের বদলির প্রস্তাব বিবেচনা করে থাকে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আদালত দ্বারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ের ভিত্তিতে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

মন্ত্রী শনিবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এর আগে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ/সমপর্যায়ের বিচারকদের জন্য আয়োজিত দশম ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবীদের অশালীন আচরণের ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক উল্লে­খ করে তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা সচেষ্ট। বার এবং বেঞ্চ হচ্ছে একটা সংসারের মতো। এরকম ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু এরকম ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমাদের চাওয়া।

সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির তালিকায় নাম আসা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটা গুজব, এতে কান দেবেন না।

এর আগে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গতিশীল বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত এবং অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন। বস্তুত ন্যায়বিচার খাদ্য ও বস্ত্রের মতোই জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। কেননা খাদ্য ছাড়া যেমন জীবন বেঁচে থাকতে পারে না, বস্ত্র ছাড়া যেমন মানুষ জনসম্মুখে বের হতে পারে না, তেমনই ন্যায়বিচার ছাড়া মানুষ সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতিতে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, সামাজিক অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। আর সমাজ নিয়েই যেহেতু রাষ্ট্র, তাই অস্থিতিশীল সমাজ মানেই অস্থিতিশীল রাষ্ট্র। এরূপ রাষ্ট্রের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক স্থাপন করতে অনীহা দেখায়, তারা বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। পরিণতিতে ওই রাষ্ট্র বিশ্বসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়। তাই জাতির পিতা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সব সময় তৎপর থেকেছেন। এমনকি পাকিস্তানি শাসনামলে তিনি যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে কথা বলেছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন, সরকার ও সুপ্রিমকোর্টের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিজ্ঞ বিচারকদের উদ্ভাবনীমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিচারিক কর্মঘণ্টার সঠিক প্রয়োগ, কার্যকর মামলা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, দক্ষ আদালত ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি তাদের সুদক্ষ নেতৃত্বের কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ মামলার বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব ক্ষেত্রে সব বিচারক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

আইনমন্ত্রী এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে একটি মামলার অনেক পক্ষ তৈরি হয়ে যায়। কোনো পক্ষ চায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক, কোনো পক্ষ চায় মামলা নিষ্পত্তির সময় প্রলম্বিত হোক। কেউ কেউ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে আদালতের কালক্ষেপণ করে থাকেন। এসব বিষয় মাথায় নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দ্রুতগতিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আবার এক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না ‘Justice Hurried is Justice Buried’। বদান্যতা, মহানুভবতা, কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব ও করুণা থেকে ন্যায়বিচার আলাদা। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মর্মমূলে রয়েছে নিরপেক্ষতার ধারণা।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *