বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রাণোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বাংলা ভাষায় একটি রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার একটি রিট মামলায় এই রায় দেন।
রায়ে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত ‘মো. আক্কাস আলী ওরফে আলিমুদ্দিন বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য’ মামলাটিতে আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
বাংলায় রায় ঘোষণার সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক নাইমা হায়দার বলেন, “আজ ১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস আজ থেকে শুরু। ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের প্রথম রায়টি বাংলায় ঘোষণা করছি। বিশ্বের সব বাংলা ভাষাভাষিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলায় এ রায় ঘোষণা করছি।”
পরে বাংলায় দেওয়া রায়ে তিনি বলেন, “আলোচনা ও আইনজীবীর যুক্তিতর্ক পর্যালোচনান্তে আমরা অত্র মোকদ্দমার গুণাগুণ পর্যালোচনায় প্রবেশ না করে অত্র রুলটি নিম্নলিখিত নির্দেশনাসহ নিষ্পত্তি করতে সম্মত হই।”
নির্দেশনাগুলো হল- (ক) দরখাস্তকারী অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের করতে পারবেন। (খ) দরখাস্তকারী অর্পিত সম্পত্তি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের করতে চাইলে অত্র আদেশ হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে। (গ) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে তামাদি মার্জনীয় হবে। (ঘ) নিম্ন অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনালে আদেশ আপিল দায়ের পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। পক্ষগণ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দখলের বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। রিট মামলা নিষ্পত্তি করা হল।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত এবং রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মো. শরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়া শুরু হয়। প্রয়াত বিচারপতি এ আর এম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন।
ভাষা শহীদদের সম্মানে হাই কোর্টে বাংলায় রায়
এরপর সাবেক বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলায় বেশ কয়েকটি রায় দেন।
বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম হাই কোর্টে থাকাকালীন বেশ কয়েকটি মামলার রায় বাংলায় দিয়েছেন।
আর নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে বাংলায় রায় দিয়ে যাচ্ছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালও বাংলায় রায় লেখেন। চার বছর আগে দেশের সব নদীকে আইনি অধিকার দিয়ে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণার রায়টি লিখেছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। সর্বশেষ গতবছরের অক্টোবর একটি ‘চেক প্রত্যাখ্যান’ মামলার রায় বাংলায় দেন এ বিচারপতি।