রাজনীতি

ছাত্র রাজনীতিকে এখন মানুষ সম্মানের চোখে দেখে না: রাষ্ট্রপতি

 রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ছাত্র রাজনীতিতে অশুভ ছায়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দখলবাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্র রাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে দেখে না।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের আইনে চলে কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অপব্যবহার করে। একটা শ্রেণি নিজেদের সুযোগ সুবিধা ও আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রদের ব্যবহার করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। ইদানিং পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপাচার্য ও শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার খবর বড় করে ছাপা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সমন্বিত উদ্যোগে একটি দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সার্কভুক্ত দেশের অর্থনীতি দেউলিয়াত্ব নিয়ে সেই দেশের একজন মন্ত্রীর খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতির এ দেউলিয়াত্বের জন্য আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের চক্রকে দায়ী করা হয়েছে। এ চক্রের অশুভ আঁতাত যে কোনো দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির অপকর্ম ও অদক্ষতা গোটা শিক্ষক সমাজের সম্মানকে ম্লান করছে। এছাড়া ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নীতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত। আমি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বান জানাই। মনে রাখতে হবে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূলকাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন করা।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ব্যবসা শুরু করে চিন্তা করে যে কীভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়। নীতি নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কীভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে সেই চিন্তা-ভাবনায় ব্যস্ত থাকে। খেলাপি ঋণের এক শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হন। তারা ঋণ নেনই না দেওয়ার জন্য। অবশ্য এর সঙ্গে এক শ্রেণির ব্যাংকারদের যোগসাজশ আছে। একই কথা চাকরিজীবীদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তারা চাকরিতে ঢুকেই কীভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। ভুলেই যান তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দেশ ও জাতির বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হন না। দুর্নীতি আমাদের উন্নয়নের পথে অন্যতম বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

সমাবর্তনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি এবং এমনটি মৌলিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী, জাতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী আর ঘৃণিত। আপনারা কোনো কারণেই নিজেদের ওই দলে অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, অর্পিত দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ সততা, ভালোবাসা, একাগ্রতা ও বিশ্বাস রেখে মানুষকে নিরলস সেবা দিয়ে যাবেন। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবেন, ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবেন। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কনিজের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। সমাবর্তনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

এর আগে বিকেল তিনটায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা সমাবর্তনস্থলে এসে পৌঁছায়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক এবং সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশ নেন।

এবারের সমাবর্তনে ১৫ হাজার ২২৩ জন গ্রাজুয়েট অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৬ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন, পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮১ জন এবং সাপ্তাহিক কোর্সের (স্নাতকোত্তর) তিন হাজার ৪৬২ জন। এছাড়া সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সবগুলো বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *