বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত নামিয়ে ফেলুন। ওই ভূত আর বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না। না। আমরা মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়েও আজকে আমরা আমেরিকার অ্যাম্বাসেডরকে বলে এসেছি, ইট ইজ নট পসিবল টু রিটার্ন টু কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সো কল এগেইন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বাংলাদেশ আর ফেরত যাবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণে মির্জা ফখরুলের পদত্যাগ করা উচিত। আজকে কী বলবে বিএনপি? ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন আসি আসি করে তো এলো না।
বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি অডিটোরিয়ামে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিশেষ আলোচক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য তারানা হালিম।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অবৈধ দলের অবৈধ মহাসচিব বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির একটা কনস্টিটিউশন (সংবিধান) আছে। সেই কনস্টিটিউশনে কোথায় আছে ১২ বছর ধরে মহাসচিব থাকা যাবে? সে যে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তার নিজেরই তো পদত্যাগ করা উচিত। কারণ বিএনপির কনস্টিটিউশন অনুযায়ী সে তো অবৈধ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের কাদায় পড়া গরুর গাড়ি নিয়ে একটা চিত্রকর্ম আছে। বিএনপির অবস্থা কাদায় আটকে পড়া জয়নুলের গরুর গাড়ির মতোই। বিএনপির আন্দোলন এগোয় না, পিছায় না, ডানে যায় না, বামে যায় না। কোনো নড়াচড়া নাই। ফখরুল নাকি বলে আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছি। ভুয়া ভোটার তালিকা করে প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে তোমরা গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছো। বিএনপির হাতে এই দেশ আর যাবে না। এই দেশ মেরামত করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তাদের হাতে এই বাংলাকে ফিরিয়ে দেবেন না। এখন তারা (বিএনপি) রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা আর সরকার উৎখাতের ১০ দফা ঘোষণা করেছে। সব ভুয়া।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, যারা সন্ত্রাসের মন-মানসিকতার, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত তাদেরকে ছাত্রলীগে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। যারা চাঁদাবাজি করে, কাজ করে না, মাদকের সঙ্গে যুক্ত, এরকম অনেক দিনের পচা-গলিত অংশ রয়ে গেছে, এদের বাদ দিতে হবে। সার্জারি করে বিষফোঁড়া নষ্ট করতে হবে। এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। এদের বের করে দিলে ছাত্রলীগের কোনো ক্ষতি হবে না। ভালো ছেলেমেয়েরা ছাত্রলীগে থাকলে তাদের দেখে বাকি ভালো ছেলেমেয়েরাও আসবে। আমরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা মাঝেমধ্যে লজ্জিত হই, বিব্রত হই এদের কর্মকাণ্ডে। অপকর্মকারীরা স্মার্ট না। খারাপ কাজে স্মার্ট কারোর দরকার আমাদের নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সৈনিক হতে হবে। আবেগের নয়, চেতনার সৈনিক হতে হবে। আমরা এরকম স্মার্ট কর্মী চাই।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদেরকে শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। এটা চিনতে ব্যর্থ হলে আমাদের জন্য সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। আমি বিএনপি নেতাদের বলব, আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, বাক-স্বাধীনতার কথা বলেন। অথচ আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় আমরা কথা বলতে পারিনি। আপনারা আমাদের হত্যা করেছেন, গলা টিপে ধরেছেন, অফিসের বাইরে বের হতে দেননি, ব্যবসায়ী নেতাদের ধ্বংস করেছেন, হাত-পা কেটে নিয়েছেন। কোনো কিছুতেই আমাদের দমাতে না পেরে বঙ্গবন্ধু তনয়াকে হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছেন। এখন আমি আশা করি, ছাত্রলীগের বন্ধুদের সহযোগিতায় আমরা আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তনয়াকে বিজয়ী করব। তার হাত ধরে আমরা সবাই মিলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করব।
সভাপতির বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু দুর্ভিক্ষের সময় কিংবা দাঙ্গা প্রতিরোধে, গণমানুষের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে, খাদ্য অধিকারে, ভাষা, রাজপথে, পার্লামেন্টে, স্বাধীনতা ও স্বাধীন দেশের আদর্শ কী হবে- এসব নিয়ে লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন। কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। স্বাধীনতার পরের দেশ পুনর্গঠনের জন্য তার প্রচেষ্টা মানুষের সামনে আরও ফুটিয়ে তোলা উচিত বলে আমি মনে করি।
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, এক কোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাদের ফিরিয়ে এনে ৬ মাসের ভেতরে ২ লাখ ৭৩ হাজার পরিবারকে বাড়ি করে দেন। ১৩ লাখ ৭৬ হাজার পরিবারকে নতুন জমি দেওয়া হয়েছিল, যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত সময়ের হিসেবে সর্বোচ্চ। বঙ্গবন্ধু সবসময়ই গণমুখী আমলাতান্ত্রিক সমাজ গড়ার চেষ্টা করেছেন। এজন্যই তিনি কৃষক শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখনকার সমাজব্যবস্থা অনেক দরিদ্র, অস্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটা স্থিতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়তে চেয়েছিলেন।