সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সারাদিন রোজা শেষে সবাই চান ভালো কিছু খেতে। তবে এ সময় ভালো খাবারের নামে মুখরোচক খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতাই দেখা যায়। এ ধরনের খাবারের বিখ্যাত জায়গা হলো চকের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার।
ইফতার পণ্য নিতে এখানে ছুটে আসেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এবার রমজানের প্রথম দিন জুমার নামাজের পরই জমে ওঠে চকের ইফতার বাজার। বেচাকেনা হয় খোলা আকাশের নিচে। অসংখ্য ক্রেতাসমাবেশ হওয়ায় এদিন এ বাজারে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে তাল মেলাতে পারছেন না। মাংসের পদগুলোর দাম গত বছরের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অনেক জায়গায় পেঁয়াজু, চপ বা বেগুনির দাম ঠিক থাকলেও আকারে ছোট ও চ্যাপ্টা।
চকের ইফতার বাজারে দুটি বিশাল আকৃতি ডেকচিতে গরুর মাংসের তেহারি নিয়ে আসেন মো. ইয়াসিন। ১০০, ২০০ ও ৩০০ টাকা প্যাকেটে তেহারি বিক্রি করেন তিনি। জানতে চাইলে ইয়াসিন কাগজের ছোট্ট একটি প্যাকেট বের করে বলেন, ‘প্যাকেটে সামান্য তেহারি থাকলেও অনেকে এইটুকু খেয়েই তৃপ্তি পান।’
চকের ইফতারি বাজারের সবচেয়ে মুখরোচক খাবার গরুর মাংসের সুতিকাবাব। বিশেষ করে আমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশের সুতিকাবাব। এবার এখানকার সুতিকাবাবের দাম রাখা হয়েছে প্রতিকেজি ১৪০০ টাকা। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে সুতিকাবাব কিনছেন ক্রেতারা।
চকের আরেক খাবার বড়বাপের বড় পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা নিয়ে যায়। মূলত মুড়ি বানানোর এই ভর্তা এবার বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০০ টাকায়।
আলুচপ, পেঁয়াজু, বেগুনি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, আমরা এখানে সারা বছরই এই খাবার বিক্রি করি। সবকিছুর দাম বাড়ার পরও আমরা প্রতি পিস ৫ টাকাই রাখছি।
চকের ইফতারি বাজারের অন্য খাবারগুলোর মধ্যে কিমা পরোটা ৭০ টাকা, টানা পরোটা ৫০ টাকা, জালি কাবাব ৩০ টাকা, কাঠি কাবাব ৪০ টাকা, ডিম চপ ৪০ টাকা, দইবড়া ৪ পিস ১২০, ৮ পিস ২৪০ টাকা, ফালুদা আধা কেজি ১০০ টাকা, পেস্তা বাদাম শরবত ২২০ টাকা লিটার, মুরগির ললিপপ ৩০ টাকা, সাসলিক ৮০ টাকা, চিকেন ফিংগার ৪০ টাকা, চিংড়ি বল ৮০ টাকা, আস্ত মুরগি ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির লেগ রোস্ট ৮০০ টাকা এবং কোয়েল রোস্ট ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিকেন বল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা, চিকেন টিক্কা ২০০ টাকায়। মোটা ও বড় আকারের শাহী জিলাপি পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায়।
চকের ইফতারি বাজারে প্রবেশ করার মুখেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এবার একটি মনিটরিং বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কথা বলার মতো কাউকে এদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর এ বুথের সামনেই খোলা আকাশের নিচে ঐতিহ্যবাহী এসব খাবার বিক্রি হচ্ছে।
তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের পার্থক্য হলো বেশিরভাগ দোকানি ও বিক্রেতার হাতে গ্লাভস রয়েছে।
চকে ইফতার কিনতে আসা রমজান আলী বলেন, এখানকার সুতিকাবারের জুড়ি নেই। আর রোজার এ সময়টাতেই অনেক যত্ন করে এই খাবারটা বানানো হয়। তাই দাম বাড়ার পরও আধা কেজি কিনেছি পরিবারের সবাই মিলে খাব বলে।